মে মাস এখন। টুকুন জানতে চায় মে মাসে সমস্ত লাল ফুল ফোটে কেন? টুকুনের সেই নানারকম প্রশ্ন!
লোহু কা ঝান্ডা
অস্তগামী প্রবীণ রোদ তখন ছড়িয়ে পড়েছে আকাশের গায়ে। বেরিয়ে পড়লো টুকুন বাবার হাত ধরে বৈকালিক ভ্রমণে।
বাবা! আকাশটা দেখো! আর দেখো যেন লাল সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়েছে গাছটার মাথার উপরে।
ওটা হলো কৃষ্ণচূড়া গাছ। ওদের সমস্ত ডালের মাথায় পরানো রয়েছে ফুলের মুকুট।
বাবা! ওই দেখো! ওই গাছটার মাথার ওপরেও রোদ কেমন খেলতে লেগেছে!
ওটা পলাশ গাছ।
এবার ওই মাঠের দিকে দেখো! একলা গাছটার ফুলের মাথাগুলো কেমন স্বপ্নিল উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে!
ওটা শিমুল। আরেকটু দূরে ওই যে গাছটা দেখছিস, ওটা মান্দার গাছ। গায়ে কাঁটা, কিন্তু মাথার দিকে তাকিয়ে দেখ! ওইখানেও সূর্যের লালিমা কেমন তার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে!
বাবা! একটা কথা বলবো?
বলো তো! ওই গাছগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী?
এটা আবার একটা প্রশ্ন হলো?
ওদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো ফুল ফোটানো। মানুষের মনকে শুদ্ধ ও রঙিন করে তোলা।
টুকুন বলল, সে তো সবাই জানে। আসল কথাটি তুমি বলতে পারলে না! সব ফুলগুলোই দেখো, রক্তবর্ণের ফুল।
বাবা! মে মাসে বেশিরভাগই লাল ফুল ফোটে কেন?
ফুটবেই তো! ওই যে তোরা বলিস না! লাল পতাকা, লাল ঝান্ডা!
আসলে তোরা ঠিক বললেও কথাটায় সেই গুরুত্ব নেই।
কেন বাবা? গুরুত্ব নেই কেন?
ওটা আসলে রক্ত পতাকা। ওটা আসলে লোহু কা ঝান্ডা।
শোন্ টুকুন!
পয়লা মে শুনেছিস তো? মে-ডে!
ওই যে আমেরিকার হে মার্কেট আছে না! যেটা ভূগোলে পড়েছিস!
সেখানে মেহনত শোষণের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা একদিন লড়েছিল জোর লড়াই।
আট ঘন্টা কাজের দাবিতে ছিল সে লড়াই। সে লড়াইয়ে কত মজদুর গুলি খেয়ে মরেছিল জানিস?
তারা বুকের রক্তে ভিজিয়ে নিজেদের জামা লালে লাল করে আকাশের দিকে তুলে সোচ্চারে দাবি জানিয়েছিল।
সেই রক্তে ভেজা জামা-ই হয়ে উঠলো ঐতিহাসিক — লাল পতাকা, লাল ঝান্ডা।
আর সেই খুনসিক্ত সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো দুনিয়ার যেখানে যেখানে, সেখানে সেখানে সেই রক্তবীজ থেকে যে গাছ জন্ম নিল, সেই গাছে প্রতি বছর মে মাসেই ফুটতে থাকলো লাল ফুল।
লাল হচ্ছে সেই রক্তের প্রতীক!
টুকুন বলল, এই লড়াইয়ের কোনো লিডার ছিল না?
ছিল। পার্সনস, স্পাইজ, এঞ্জেল,ফিশার আরো কতজন!
টুকুন! ওদের ফাঁসি হয়ে গিয়েছিল।
ওই দেখ! দূরে তাকিয়ে! স্তবকে স্তবকে লাল ফুল ফুটে রয়েছে। যেন মাথায় হেলমেট—
ওরা কামগার লড়াকু মানুষের জন্য
হাসতে হাসতে পরেছিল ফাঁসি।
প্রমাণ চাস?
তো চল,মে-ডে প্রভাতে দেখে আসি।
ওদের শ্রদ্ধা জানাতে মাটিতে ছড়িয়ে আছে অজস্র কৃষ্ণচূড়া স্বতঃস্ফূর্ত রাশি রাশি।
টুকুন একবার তাকালো আকাশের দিকে
তারপর মাটির দিকে চোখ রেখে দেখতে থাকলো ছড়িয়ে পড়া কৃষ্ণচূড়ার অসংখ্য পাপড়ি।
দূনিয়ার মজদুর এক হো!
টুকুনের কন্ঠ তখন আবেগরুদ্ধ।
বলল, বাবা! আমি জানি
মানুষের জয় নিশানা করে বলেই এর নাম নিশান আর
সেই জয় ঘোষণা করে পতপত উড়তে থাকে, তাই তো এর নাম পতাকা আর
ঝুঁকির স্পর্ধা নিয়ে ঝঞ্ঝার বুকে মাথা উঁচু করে থাকে বলেই এর অপর নাম ঝান্ডা।
বাবা! মনে পড়ে
পাভেলের বুড়ি মায়ের কাঁধে
সেই দুর্বার লাল ঝান্ডাটা
কেমন ঢেউয়ের বেগে উড়ছিল…