আমার উনি বললেন, কি গো! আজ গণেশ চতুর্থী। গণেশ নিয়ে কিছু লিখবে না? তোমার তো কত গণেশ!

আমার গণেশরা
তমাল সাহা

আমি এই ছায়াপড়া বেলায় পাঁচবার গণেশের মুখোমুখি হয়েছি।
প্রথম গণেশকে দেখি রাজমিস্ত্রি হিসেবে।
পরের গণেশকে খুঁজে পাই ছুতোর মিস্ত্রির ঝোলাকাঁধে।
তৃতীয়বার গণেশকে পেয়েছি কলমিস্ত্রি রূপে।
চতুর্থবার পেয়েছি মাথায় ফেট্টিবাঁধা রংমিস্ত্রির চেহারায়।

আমার গণেশরা সবাই খেটেখাওয়া মিস্ত্রি। আমি সব গণেশকেই জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তাদের কারুর মায়ের নামই দুর্গা নয়। তবে কি? কেউবা মালতি-বকুল, কেউবা চাঁপা, কেউবা নয়নতারা। তাদের মায়ের নাম সবই ফুলের নামে।

তাদের পিতৃ পরিচয়ও জিজ্ঞেস করে দেখেছি। কারুর নামই শম্ভুনাথ, মহাদেব, ভোলানাথ এমনকি নীলকন্ঠও নয়। তাদের বাবার নাম মদনচন্দ্র রতনলাল দিলীপ কুমার এমন সব।

আমি গণেশদের কাছে ঋণী। গণেশরা না থাকলে আমি কর্ণিক-বাসুলি,বাটালি-করাত-তুরপুন অন্যদিকে প্লাম্বিংয়ের যন্ত্রপাতি, রঙের বিভিন্ন ব্রাশ বাঁশের ভাড়া এসব সম্বন্ধে জানতে পারতাম না।

এখন পাঁচ নম্বরের গণেশ আমার কাছে আছে। সে ফাই ফরমায়েশও খাটে। আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। দেখভাল করে আমাকে কাকু বলে ডাকে। তবে জানিয়ে রাখি ওর কিন্তু মা নেই। আমার কোনো গণেশই পেটমোটা নাদা নয়। ওরা বসে বসে পুজো পায়না।

ওরা মানুষের জন্য শ্রম দেয়, মানুষের পুজো করে। আমার গণেশরা পুরোহিত।

গণেশ বলে, কাকু গণেশ মানে কি? আমি বলি গণেশরা বাঙ্গালদের খুব কাছের মানুষ। তারা আদর করে গণেশকে গণশা বলে ডাকে।
আর গণেশ মানে গণ-ই ঈশ। গণ মানে মানুষ আর ঈশ মানে শ্রেষ্ঠ। তার মানে পৃথিবীতে মানুষই শ্রেষ্ঠ।

তোরা আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও আসলে আমি তোদের মনে মনে প্রণাম করি।