আমার শরীর জুড়ে লেখো
তমাল সাহা
কেউ পড়ে না বলে এখন আর খাতার পাতায় লিখিনা।
অরণ্যে চলে যাই
বৃক্ষ নিধনের পর খণ্ড খণ্ড লাশের গুঁড়িতে কুঠার দিয়ে তার নীরব যন্ত্রণা লিখি।
পৃথিবী ছাড়তে পারি না, তাই ঘুরে ঘুরে লিখি।
বালি তুলে নেওয়ায় নদী বন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে,
নাব্যতা হারিয়ে উদাস তার মুখ।
মজা নদীর তীরে বসে মাটিতে খুরপি দিয়ে তার বেদনা লিখি।
জলাশয় বুজিয়ে উঁচু উঁচু কত আবাসন আকাশ ছুঁয়ে যায় ! জলাশয়দের জলকষ্ট হয় বুঝি!
আবাসন রং করছে যে রংমিস্ত্রি তার হাতের ব্রাশখানি কেড়ে নিয়ে আবাসনের গায়ে লিখে দিয়ে আসি পুকুরটির তৃষ্ণা ক্ষোভ।
ডিনামাইটে বিদীর্ণ পাহাড়। অজস্র পাথুরে খণ্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
পাহাড়ের বুক ফুঁড়ে চলে গিয়েছে গিরিপথ।
ছেনি হাতুড়ি দিয়ে গিরিপথের গায়ে লিখে আসি আক্রোশ।
মন্দির মসজিদ গির্জার স্থাপত্যে চোখ জুড়িয়ে যায়।
ধরিত্রী সব ধারণ করে,
চোখে জল এসে যায় তবুও কর্ণিক দিয়ে লিখি বিধর্মী অক্ষরমালা।
দাঙ্গার আগুন জ্বলছে
রেচন জল দিয়ে লিখে আসি নির্বাপনের কথা।
দলিত নারীটির বিধ্বস্ত দেহ পড়ে আছে
গর্ভাধারের উৎসমুখে জমাট বাঁধা শুকনো কালো রক্ত।
মাথানিচু করে তার বুকের বারান্দায় রক্ত দিয়ে লিখে আসি, আমাকে অভিশাপ দাও ।
বস্তিপোড়া মানুষের শ্মশানখোলায়
ছাই দিয়ে লিখে আসি, আগুনের ধর্ম শুধু পোড়ানো নয়, জ্বলে ওঠা এবং জ্বালানো।
আগ্নেয়গিরির গায়ে গলিত লাভা দিয়ে লিখি বিস্ফোরণ!
সেই বিস্ফোরণ কবে হবে তার জবাবি একটি পোস্টকার্ড রেখে আসি অগ্নি-পর্বতের কাছে।
নগ্ন উল্লাসে আমি দৌড়তে থাকি
ধর্ষিতা জননী জন্মভূমি আমাকে তাড়া করে।
আমার কোনো কাগজ নেই, আমার কোনো কলম নেই।
মনসৃজা বলে, এই তো আমি!
তুমি লিখে চলো, এই নাও ছুরিকা কলম।
দেখো আমার বস্ত্রস্খলন
দেহে এখন আর কোনো শৃংখল নেই
আমার দেহ এখন বিশাল বিস্তৃত লেখার পাতা
আমার শরীর জুড়ে লিখে চলো
তোমার রাগ অনুরাগ প্রেম ঘৃণা ক্রোধ
যা লিখতে চাও সব সব কবিতা!