শীত পড়েছে। শুরু হয়েছে কবিতা উৎসব– এপার ওপার বাংলায়। শীতের সঙ্গে কবিতার সম্পর্ক কোথায়, টুকুন জানতে চায়। কী দিতে পারে কবিতা?
কবিতা উৎসব
তমাল সাহা
টুকুন বলে, বাবা! শীতের প্রহরে কবিতা উৎসব হয় কেন ?
এপার ওপার বাংলায় বিশাল কবিতার আয়োজন। শীত তো স্থবির সময়।
কাঁথামুড়ি দিয়ে থাকে মানুষ।
কবিতা তখন কী করতে পারে?
আমি বলি,
শৈত্যপ্রবাহ প্রতিরোধ করতে পারে একমাত্র কবিতা।
অক্ষরের নিজস্ব আগুন আছে।
তার উচ্চারণে শব্দতরঙ্গ গিরি কন্দর জলস্রোত জনপদে প্রতিধ্বনি ও অনুরণনে চেতনা জাগায়।
আক্ষরিক আগুনে উষ্ণ হয়ে মানুষ আড়মোড়া ভেঙে ঋজু হয়ে ওঠে সরলবর্গীয় বৃক্ষের মতো।
টুকুন বলে, শীতের রাতে বিনিদ্র জেগে কারখানায় ব্লাস্ট ফার্নেসের আলোয় শ্রমিকের নির্মাণ কি কবিতা হতে পারে?
লাঙলের ফলায় কর্ষিত জমিতে
যে শস্যদানা নবান্নের উৎসবের আয়োজন করে
তা কি কবিতা হতে পারে?
পিটুলি গোলায় আঙুল ডুবিয়ে ডুবিয়ে আমার মা যে উঠোন জুড়ে আলপনা তৈরি করে এই উৎসবে, তা কি কবিতা হতে পারে?
আমি বলি, কবিতা মানে সৃজন, নির্মাণ।
ওরা হাতুড়ির আঘাতে, লাঙলের ফলায় জীবনের কবিতা নির্মাণ করে।
তোমার মা পিটুলিতে আঙুল ডুবিয়ে উঠোনের মাটির সংঘর্ষে নতুন জীবনের আলপনা এঁকে যায় সেটাই তো অন্যতম কবিতা।
আর আমরা
তোমার মাকে দেখি,
শ্রমিষ্ঠ মানুষকে দেখি, লাঙলজীবী মানুষকে দেখি। দেখতে দেখতে আক্ষরিক রূপদানে
তাদের কবিতার দিকে নিয়ে যাই।
শীত তো প্রতীক মাত্র। স্থবিরতার প্রতীক। তাকে ভেঙে ফেলার জন্যই এই সময়ে কবিতার উৎসব।
কবিতা হল জীবন–
সবুজ পালং শাক, সীমের মতো উজ্জ্বল।
কবিতা হলো উজ্জ্বল দীর্ঘ পেঁয়াজ পাতা যার নীচে লুকিয়ে আছে পেঁয়াজের ঝাঁঝ।
কবিতা হলো সজীব গাজরের মতো রঙিন।
বীটের মতো উজ্জ্বল এক অদ্ভুত মেরুন রঙ। কবিতা হলো পাকা টমেটোর মতো উজ্জ্বল লাল।
টুকুন বলে, তবে বাবা, আমি বলি?
কবিতা এক অনন্য সবুজ সব্জি, জীবন আস্বাদ।
শীতের দুপুরে নদীপ্রবাহের ধারে সম্মিলিত প্রাণের কলরব– শুকনো ডালপালা কুড়িয়ে এনে আগুন জ্বালানো এক চড়ুইভাতি!