উৎপল রায় :: অবতক খবর :: জলপাইগুড়ি :: সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মানুষ। ময়নাগুড়ি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। ময়নাগুড়ি ব্লকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কমপক্ষে ২ হাজার বাড়ি। কয়েক হাজার গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে পাট এবং ভূট্টার। অসংখ্য বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ময়নাগুড়ি ব্লকের রামশাই, আমগুড়ি, চুড়াভান্ডার, খাগড়াবাড়ি-১ এবং ২ সহ শহর এলাকার বাগজান ও ব্যাংকান্দি এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন, কমপক্ষে ১ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ। এর মধ্যে বেশকিছু বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। পুরো এলাকা ঘুরে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েতের পানবাড়ি বাজার, পূর্ব বড় গিলা, আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোয়ার্টার মোড়, বেতগাড়া চাড়েরবাড়ী, রথেরহাট, ভাঙ্গারহাট সহ খাগড়াবাড়ি এক গ্রাম পঞ্চায়েতের খাটিয়াপাড়া৷ পুরাটুরবাড়ি সহ বিস্তীর্ণ জায়গাতে ক্ষতির পরিমাণটি বেশি। এলাকার বেশ কিছু বাড়ি পুরোপুরিভাবে ভেঙে গিয়েছে। ময়নাগুড়ির বিডিও ফিন্টসো শেরপা বলেন, একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই সব জানা যাবে।
ধূপগুড়ি ব্লকের বিভিন্ন এলাকা প্রবল ঝড়ে ক্ষতি হয়। বাড়ির উঠোনে থাকা শিমুল গাছ ঘরের ওপরে পড়ে গিয়ে আহত-১। সোমবার রাত ১১টা নাগাদ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখী ঝড়ের পাশাপাশি শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। ঝড়ের দাপটে বহু জায়গায় পড়ে যায় গাছ। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো গ্রাম। সাকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৪/১৯৬ নম্বর পার্টে ঝড়ের দাপটে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গাছ, বাঁশ গাছের ঝার পড়ে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে কৃষকের চাষের ফসলেরও। সকাল থেকেই এলাকার যুবকদের সহযোগিতায় গাছ কাটার কাজ শুরু হয়। বেশ কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুত্ পরিষেবা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
মঙ্গলবার সকালে সাকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝড় কবলিত এলাকাগুলিতে পরিদর্শন করেন উপপ্রধান সুধীরচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, গিয়ে দেখা গেল ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে গাছ পড়ে গিয়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে। বহু মানুষের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। আবার ঘরের উপর গাছ পড়ে চাল ভেঙেছে প্রচুর। চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে।সকলে যাতে সরকারি সাহায্য পায় এ বিষয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা বলব।
ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল ধূপগুড়ির গধেয়ারকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের কুর্শামারি সহ অধিকাংশ এলাকা। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির মাঝেই ঘূর্ণিঝড়ে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে গধেয়ারকুঠি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ধর্মনারায়ন রায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। এদিকে ঝড়ে বড় গাছ ভেঙে সরকার সুলভ শৌচালয়ের ঘরে ওপর পড়েছে। নবনির্মিত ওই ঘর ভেঙে গিয়েছে। কুর্শামারির বাসিন্দা খগেন সরকার বলেন, মুরগির ফার্মের খুঁটি সহ ঘর ভেঙে পড়েছে। প্রধান বলেন, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাধারন ক্ষতি ছাড়াও স্কোয়াশ, ভুট্টা খেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হবে।
সোমবার বিকালে ক্ষণিকের ঝড়ে মাল শহর এবং লাগোয়া এলাকায় একাংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল। এদিন বিকালে শহর এবং লাগোয়া এলাকার উপর দিয়ে প্রবল বেগে কয়েক মিনিটের প্রবল ঝড় বয়ে যায়। এর জেরে মাল শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়দিঘি রোডে গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া রাজ্য আবগারি দপ্তর, শহর লাগোয়া ক্ষুদিরাম পল্লী এবং তেসিমলা এলাকার থেকেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে।
ক্ষুদিরাম পল্লীর বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম, সোমনাথ পাল, তেসিমলা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি। মাল পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য প্রাক্তন কাউন্সিলার পুর প্রশাসক বোর্ডের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডের কো-অডিনেটর উৎপল ভাদুড়ি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন চলছে। আমরা বিদ্যুতের তারের উপর ভেঙে পড়া গাছপালা সড়িয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করতে চেষ্টা চালাচ্ছি।