অবতক খবর,২৯ জুলাই,মলয় দে নদীয়া :-মাত্র দশ বছর বয়স থেকে পাড়ার মাঠে বুট ছাড়া খালি পায়ে ফুটবল প্র্যাকটিস শুরু করে শান্তিপুরের দ্বাদশ শ্রেণীর কিশোর পৌঁছে গিয়েছে সাফল্যের অনেকটা কাছাকাছি। নদীয়া শান্তিপুরের বাবলা পঞ্চায়েতের আড়বলা গ্রামের বাসিন্দা শুভঙ্কর বিশ্বাস দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা সেই অর্থে খুব ভালো নয়।
তবে আর্থিক দুরবস্থা কখনোই থমকে দিতে পারেনি শুভঙ্করকে। পরিবার ও নিজের কোচের সহযোগিতায় সে বর্তমানে খেলছে কলকাতার সিএফএল ফিফ্থ ডিভিশন ফুটবল ম্যাচ। বর্তমানে স্ট্রাইকারের পজিশনে খেলছে সে। কলকাতায় এই মুহূর্তে চলছে সিএফএল এর ফিফথ ডিভিশন ফুটবল ম্যাচ। সেখানে চারটি খেলায় সর্বমোট সাতটি গোল দিয়ে বর্তমানে গোটা টিমের মধ্যে টপ র্যাঙ্কে রয়েছে শান্তিপুরের কিশোর শুভঙ্কর।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে আগ্রহ ছিলো তার। বাবাও ফুটবল খেলতেন পাড়ার মাঠে তবে অভাবের কারণে অনেকদূর পৌঁছাতে পারেননি তাই ছেলের মধ্যে দিয়েই সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় তিনি।
স্কুলের ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে কিংবা লীগ প্রতিটাতেই দক্ষ ভাবে খেলে গিয়েছে সে। এবং এরপর কলকাতায় বিভিন্ন মাঠে বিভিন্ন ক্লাবের আয়োজনে ফুটবল ম্যাচেও কখনো অনূর্ধ্ব ১৫ কখনো অনূর্ধ্ব ১৬ তে যথেষ্ট কৃতিত্বের সঙ্গে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে শুভঙ্কর।
নদীয়ার শান্তিপুরের ছেলে শুভঙ্কর তবে খেলার জন্য তাকে প্র্যাকটিসে যেতে হয় হাবরাতে। হাবরা থেকে শান্তিপুরের দূরত্ব যথেষ্টই তবে শত বাধা অতিক্রম করে সেই প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছে খেলাধুলায় তার জীবন গড়ার লক্ষ্যে। ছোটবেলা থেকেই স্থানীয় ফুটবল প্রশিক্ষক দেব কুমার বিশ্বাস তার পাশে রয়ে গিয়েছেন। তবে স্কুল কিংবা অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থা থেকে সেই অর্থে সুযোগ-সুবিধা পায়নি বলেই জানালো শুভঙ্কর। আগামীতে তার ইচ্ছে এভাবেই পরিশ্রম ও অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে পরবর্তী খেলা গুলিতেও আরো ভালো ফল লাভ করতে।
শুভঙ্করের বাবা দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, ছেলের সাফল্যে খুবই ভালো লাগছে তবে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি, সেই অর্থে আমার আর্থিক সামর্থ্য নেই। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম ওর খেলা ধুলোয় আগ্রহ বেশি আমিও খেলা প্রেমী লোক সেই কারণেই কষ্ট করে হলেও ছেলেকে খেলাধুলার মধ্যেই রেখেছি। ছোটবেলা থেকে আমি ওকে বিভিন্ন জায়গায় খেলতে নিয়ে যাই কিন্তু সে ক্ষেত্রে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে রোজগারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এখনো পর্যন্ত কেউ আমাদের তেমনভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। শুধু আমার ছেলে বলে নয় গ্রামের এই মাঠ থেকে অনেক প্রতিভাবান প্লেয়ার আছে যাদের একটু সহযোগিতা করলে পৌঁছে যেতে পারে অনেক দূর। আমরা চাই সরকার কিংবা কোন স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন আর্থিকভাবে সাহায্য করুক।
শুভঙ্করের স্থানীয় কোচ দেব কুমার বিশ্বাস জানান, শহরের বাচ্চারা যেখানে অ্যান্ড্রয়েডে সীমাবদ্ধ হয়েছে এখনো সে জায়গায় শুভঙ্করের মত অনেকেই এই গ্রামের মাঠে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে, তবে ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন কিংবা সরকার যদি একটু মুখ তুলে তাকায় তাহলে এরকম প্রতিভা আরো অনেক বেরোবে। আগামী প্রজন্মের অনেক প্লেয়ার তৈরি হবে। যারা দৃষ্টান্ত হয়ে অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে।
তবে শত দারিদ্রতার মধ্য দিয়েও শুভঙ্কর জীবনের লক্ষ্যেও গোল দিতে প্রস্তুত। তবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় সেই রাস্তা বর্তমানে অনেকখানি বন্ধুর! তবে হাজারো বাধ্যবাধকতার মধ্যেও সকলকে পাশ কাটিয়ে মাঠে বল নিয়ে গোলপোস্টের দিকে এগিয়ে যাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য শুভঙ্করের!