অবতক খবর,৫ ফেব্রুয়ারি: কাঁচরাপাড়া স্টোর ব্লক ১১৭২/এম,লালবাহাদুর স্কুল সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দা উত্তম রাউত(২৬)। পেশায় গাড়ি চালক। তার মৃতদেহ পর্যন্ত পেল না তার পরিবার।
ঘটনার বিস্তারে জানা গেছে,গত ২৯শে জানুয়ারি সকালে কাঁচরাপাড়া বাগমোড় থেকে তিনজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন উত্তম রাউত। কিন্তু কে জানত যে সে আর ফিরবে না!
উত্তম রাউতের কাছে ২৯ তারিখ ফোন আসে যে তিনজনকে নিয়ে যেতে হবে বিহার। উত্তম কাঁচরাপাড়া বাগমোড় থেকে ওই প্যাসেঞ্জারদের নিয়ে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেন।
তাঁর বড় ভাই উমেশ রাউত জানান, আমার ভাইয়ের কাছে রঞ্জন যাদব নামে এক ব্যক্তির ফোন এসেছিল এই প্যাসেঞ্জারদের নিয়ে বিহারের যাওয়ার জন্য। এরপর ২৯ রওনা দেওয়ার পর রাত সাড়ে নটা নাগাদ ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়। তখন সে ফোনে তার স্ত্রীকে জানায় যে, সে সমস্তিপুরে রয়েছে এবং সেখানে খাওয়া-দাওয়ার সারবে।
এই শেষ কথা। ৩০শে জানুয়ারি তাঁর স্ত্রী যখন ফোনে তাঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাঁর ফোন প্রথমে কেউ ধরেনি। এরপর ফোন বিজি আসতে শুরু করে,তারপর নট রিচেবল এবং সবশেষে ফোন সুইচ অফ আসে। আর যোগাযোগ করা যায়নি উত্তম ( প্রকাশ) রাউতের সঙ্গে।
এরপর রঞ্জন যাদব,যে ওই প্যাসেঞ্জারদের বিহারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল তার সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তমের পরিবার। এরপর থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়।
এরপর রঞ্জন যাদব এবং চন্দন পণ্ডিতকে পুলিশ জেরা করে। যেহেতু ওই প্যাসেঞ্জারদের নিয়ে যাওয়ার জন্য চন্দন পণ্ডিতের কাছে এই প্রথম ফোন এসেছিল তাই পুলিশ চন্দন পণ্ডিতকে জেরা করে।
এরপর পুলিশ রঞ্জন যাদব,চন্দন পন্ডিত এবং উত্তম রাউতের জামাইবাবু লাল্টু রাউতকে বিহারে পাঠায়,যেখানে উত্তম রাউত ভাড়া নিয়ে গিয়েছিল।
উত্তম রাউতের ফোনের শেষ লোকেশন গোপালগঞ্জ, বৈকুন্ঠপুর দেখায়। তারা সেখানে গিয়েও খোঁজখবর করেন।
আর সেখান থেকে জানা যায় যে ৩০ জানুয়ারি সেখানে এক অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কিন্তু বৈকন্ঠপুর থানার পুলিশ তিন দিনের মাথায় উত্তম রাউতের দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে, কারণ তার দেহ সনাক্তকরণের জন্য কেউ আসেনি।
এরপর সেই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
মাত্র বিয়ের চারমাসের মাথায় খুন হয়ে গেল একটি তরতাজা প্রাণ।
আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল, মাত্র তিন দিনের মাথায় শনাক্তকরণের অভাবে মৃতদেহ পুড়িয়ে দিল?
বৈকুণ্ঠপুর অঞ্চলের স্থানীয় পোর্টালগুলো খুনের সংবাদ প্রকাশ করেছে সেখানে দেখা যায় উত্তম রাউতের নাভিতে পেরেক ঢুকিয়ে ও বুকে গুলি করে তাকে খুন করা হয়েছে। আরও দেখা যায় তার হাত-পা বেঁধে তাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
উত্তম রাউতের দাদা রঞ্জন যাদব এবং চন্দন পণ্ডিতের নামেই অভিযোগ করেছে। কারণ তারাই ওই প্যাসেঞ্জারদের দিয়ে উত্তমকে বিহারে পাঠিয়েছিল। কিন্তু কারা গিয়েছিল, তাদের পরিচয় কি, তাদের কোনো কাগজপত্র না দেখেই যেহেতু তারা উত্তমের সঙ্গে তাদের পাঠিয়েছিল,তাই সন্দেহ প্রথমে তাদের দিকেই যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিহার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে উত্তম রাউতের পরিবার। এত তাড়াতাড়ি কিভাবে তারা বডি পোড়াতে পারে? আর তাদের কাছে কোনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নেই। কোনো রকম কোনো সহযোগিতা করেনি পুলিশ।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, উত্তম রাউত যে গাড়িটি অর্থাৎ একটি নতুন স্করপিও নিয়ে এই প্যাসেঞ্জারদের নিয়ে গিয়েছিল, রহস্যজনকভাবে সেই গাড়িটি উধাও।
এখন প্রশ্ন,কারা কেন খুন করল উত্তমকে? তাঁর গাড়ি কোথায়?
এদিকে চন্দন জানান,কয়েকজন আমাকে ভাড়া নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোন করেছিল। কিন্তু যেহেতু তখন আমার কাছে গাড়ি ছিল না,তাই আমি রঞ্জন যাদবকে বলি ভাড়া নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রঞ্জন উত্তম রাউতকে সেই ভাড়া নিয়ে যেতে বলে। এই মামলায় আমার কোন দোষ নেই।
অন্যদিকে বিজপুর পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে।