অবতক খবর,৫ জুলাইঃ একটি নাম-ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য, প্রপার নাউন। উচ্চারণ করলেই বুকের ভেতর উত্তেজনা,উত্তাপ ঘনীভূত হয়ে আসে। বাঙালি জীবনে এমন অনেক নাম রয়েছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র,ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা, কল্পনা কতসব নাম!
বীজপুরের ইতিহাসে এমন একটি উল্লেখযোগ্য নাম বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী। হালিশহর শিবের গলিতে যার জন্ম। ভারতীয় সশস্ত্র সংগ্রামে যার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে সেই মানুষটি কাঁচরাপাড়ায় অবহেলিত। তিনি স্বাধীন ভারতবর্ষের বীজপুর কেন্দ্রের প্রথম বিধায়ক। সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু মানুষের জন্য দেশের শৃঙ্খল মুক্তির জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আমাদের ঘরের মানুষ,নিকট মানুষ। একেই বলে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।
তিনি নিজে লাঠি খেলা,কুস্তি জানতেন। আর তিনি যে বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন তার জন্য প্রয়োজন ছিল অস্ত্র। রডা কোম্পানির মাউজার পিস্তল লুটের ঘটনা আজ ইতিহাস। ভারতবর্ষের সশস্ত্র আন্দোলনে তাকে বলা হয় রিভলবার মাস্টার। তিনি দু’হাতে পিস্তল চালাতে জানতেন। মহাভারতের সব্যসাচী ছিলেন তিনি। তার দুই হাঁটুতে রিভলবার বাঁধা থাকত। পরনের ধুতির নিচে লুকিয়ে রাখতেন। ভারতবর্ষের বিশেষ করে বঙ্গে যত সশস্ত্র আন্দোলন হয়েছে, তিনি ছিলেন তার রিভলবার সাপ্লায়ার। সেই মানুষটি উদ্বাস্তুদের স্বার্থে কাঁচরাপাড়ায় হকার্স কর্ণার প্রতিষ্ঠা করেছেন। উদ্বাস্তু কলোনিতে পুনর্বাসন দিয়েছেন এবং কাঁচরাপাড়া পৌরসভায় পানীয় জল সরবরাহের পরিকল্পনায় তার একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তার মৃত্যুর পর ১৯৫৪ সালে কাঁচরাপাড়া একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিল। তার নামে বিপিন বিহারী স্মৃতি পাঠাগার নির্মিত হয়েছিল। এই নয়া প্রজন্ম কি জানে সেই পাঠাগারটি কোথায় ছিল বা আছে? সেই পাঠাগারটি ফায়ার ব্রিগেডের উল্টোদিকে যে সমস্ত বাড়ি রয়েছে তার পিছনে আজও পড়ে রয়েছে খন্ডহর অবস্থায়। এই হচ্ছে আমাদের পূর্ব পুরুষের প্রতি স্মৃতি তর্পণের নমুনা।
এই বাড়িটিকে সুরক্ষিত করা যেত, সংরক্ষিত করা যেত। তার দায়িত্ব পৌরসভা নেয়নি কেন, পৌরসভাই জানে। কাঁচরাপাড়া সাধারণের পাঠের জন্য এই লাইব্রেরিটি একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। আজ তা অবহেলিত, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ কার পাপ? এ কার লজ্জা? কে দেবে এর উত্তর?
এখানে পরিকল্পনা করে কাঁচরাপাড়ার যে সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আমল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত, যে সমস্ত পুরাতনী ইতিহাস রয়েছে তার একটি সংরক্ষণাগার করা যেতে পারত। তাহলে নিশ্চিতভাবে এই বিপ্লবীকে সম্মান দেওয়া যেত।
আরো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এমন একটি ব্যক্তির প্রতিকৃতি পর্যন্ত নেই কাঁচরাপাড়া পৌরসভায়। পাঠকবর্গ কিছু বলবেন কি?