অবতক খবর,১৭ আগস্ট,ডেবরা: কেদার ভুড়ভুড়ী ও চপলেশ্বর জীউর মন্দির, প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন এই মন্দির! জড়িয়ে রয়েছে সোলাঙ্কিদের ইতিহাস বহু অলৌকিক কাহিনী। ১৩০১ সালে উড়িষ্যায় শোলাঙ্কিদের আক্রমণ করে আলাউদ্দিন খিলজির। সোলাঙ্কি রাজা দেবনাথ কেশিয়াড়ি হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেন, আত্মগোপন করেন কেদার কুন্ডের জঙ্গলে যার বর্তমান নাম চন্ডিপুর। জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে পায় রাজা দেবনাথ। সেই রাতেই মহাদেবের স্বপ্নাদেশ পান মন্দির তৈরির।

একটু উঁচু জমিতে ১২৯৯ সাল নাগাদ ওই চপলেশ্বর মন্দির গড়ে তোলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, এর পরেই রাজা দেবনাথ ‘রায়’ উপাধি পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই রাজ্যের নাম ‘দেবরায়’ হয়ে পরে ‘ডেবরা’ হয়েছে। ইতিহাস বলছে, ডেবরা ছিল বাংলা ও ওড়িশা যাওয়ার সংযোগস্থল। ডেবরা ব্লকের ভবানীপুর, মাড়োতলা, ওপর দিয়ে ডেবরা পর্যন্ত যে রাস্তাটি এখন রয়েছে তা আগে ‘নন্দকাপাশা জাঙ্গাল’ নামে পরিচিত ছিল। সেই সময় জেলার সব রাস্তা এই নন্দকাপাশা জাঙ্গালের সঙ্গে মিলত ছিল। বুড়ামালা, শ্যামচক হয়ে নারায়ণগড়ের কাছে জগন্নাথ রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। পঞ্চদশ শতকের শেষভাগে এই রাস্তা দিয়েই শ্রীচৈতন্য দেব দক্ষিণ ভারতে গিয়েছিলেন। সেই থেকে হয়ে চলেছে এই কেদার ভুড়ভুড়ি চপলেশ্বর জীউর মন্দিরে এর পুজো। মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক কেদার ভুড়ভুড়ি এখনো মানুষের বিশ্বাস ওই কেদার ভুড়ভুড়ির উষ্ণ প্রস্রবণ জলে স্নান করলে সর্ব রোগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। যা মন্দিরের শিবলিঙ্গর সাথে যুক্ত রয়েছে। বর্ষাকালে আজও ভুড়ভুড় করে মাঝেমধ্যে জল উঠতে দেখা যায়।

মন্দিরের অগ্নিকনে একটি ছিদ্র রয়েছে, ওই ছিদ্র থেকে মৌমাছি বেরোতে থাকে অনবরত কথিত রয়েছে যত দিনের মন্দির ততদিন ধরে ওই মৌচাক রয়েছে মন্দিরের ভেতর যা কিনা মহাদেব স্বয়ং মধু পান করেন বলে মনে করেন ভক্তরা। আরো কথিত রয়েছে মন্দিরের ধজাতে কখনো কোন পাখিকে বসতে দেখা যায়নি। মানুষের বিশ্বাস যাদের সন্তান-সন্ততি হয় না, সর্বক্ষণ রোগ জ্বালায় জর্জরিত এই মন্দিরে এসে ওই কেদার ভুড়ভুড়িতে স্নান করি ভক্তি হরি বাবাকে পুজো দিলেই সন্তান-সন্ততি লাভ হয় ও সর্ব রোগ থেকে নিরাময় হওয়া যায়। মন্দিরটি নির্মিত রয়েছে পুরোটাই পাথরের। এও শোনা যায় স্বয়ং বিশ্বকর্মা নাকি এক রাত্রিতেই এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। আজ এই শ্রাবণী সংক্রান্তিতে শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবারে জল ঢালতে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়।