নির্বাচন আসছে।আর টুকুন ক্রমে ক্রমে শব্দ বিশ্লেষণে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছে। টুকুন এবার আলোচনায় এলো ক্লাব শব্দটি নিয়ে।
ক্লাব
তমাল সাহা
বাবা! একটা ক্লাব করবে?
কেন? এই বুড়ো বয়সে ক্লাব করে কি হবে?
দু লক্ষ টাকা অনুদান পাবে।
বাবা! দান আর অনুদানে পার্থক্য কী?
আমি বলি, তোর ওই প্রেরণা আর অনুপ্রেরণার মতো। যা প্রেরণা তাই অনুপ্রেরণা। যা দান তাই অনুদান। অনু উপসর্গটি আগে লাগালে একটু ভদ্রস্থ হয়, ভালো শোনায়।এই আর কি!
টুকুন বলে,কাঁচরাপাড়ায় কত ক্লাব আছে জানো? একশো সাতাশিটি! বিবেকানন্দ,নেতাজি,খুদিরাম,ভগত সিং, মাস্টার দা আরো কত! তবে নারীদের নামে কোনো ক্লাব নেই।
এগুলো সব চলমান ক্লাব।
ক্লাব আবার চলমান হয় নাকি?
টুকুন বলে, হয়। এটাই গণতন্ত্র!
শাসক পাল্টালে ক্লাবও পাল্টি খায়।
বিবেকানন্দ বিজেপি,খুদিরাম তৃণমূল, নেতাজি সিপিএম হয়ে যায়…
বাবা! ক্লাব শব্দটি ‘কিলাব’ শব্দ থেকে এসেছে? ইনকিলাব তো ফরাসী শব্দ।
ভগত সিং পার্লামেন্টে বধিরকে শোনানোর জন্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন আর বলেছিলেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ!
আমার মনে হয় কিলাব শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে ক্লাব হয়ে গিয়েছে।
আমি বলি হবে! হয়তো তাই হবে।
বাবা জানো, ইনকিলাব জিন্দাবাদ–স্লোগানটি কে লিখেছেন? জেলখাটা কবি হাসরত মোহানি। আরে ‘চুপকে চুপকে রাতদিন আশু বহানা ইয়াদ হ্যায়’ বিখ্যাত গজলের স্রষ্টা। যেটা আবার গেয়েছেন গজল সম্রাট গোলাম আলি। ভাবতে পারো, এই মানুষটি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী!বাল গঙ্গাধর তিলকের সতীর্থ!
তুই,অ্যাতো সব জানিস কী করে?
টুকুন বলে, বাবা! ইনকিলাব কথার অর্থ কী?
আমি বলি, বিপ্লব।
টুকুন বলে সে তো বিশাল ব্যাপার। লেনিন করেছিলেন, মাও সে তুং করেছিলেন।
টুকুন এবার নিজের মাথায় চাটি মেরে বলল, বিপ্লব এখন ক্লাবে ক্লাবে ইন করে গেছে,বাবা ! ইনক্লাব!
এই সহজ কথাটা বুঝতে আমার এতক্ষণ লাগলো!
বাবা! ক্লাব তো এখন বিপ্লবী সংগঠন!
কেন? ক্লাব বিপ্লবী সংগঠন হবে কেন? ওটা তো টিভি,আসবপান, তাসখেলা, ক্যারামবোর্ড খেলা— আড্ডার জায়গা।
টুকুন বলে, ওবাবা! কিছুই জানোনা! ক্লাব মানে গদা, মুগুর ভাজা। ভোট এসে গিয়েছে। ক্লাব থেকে এখন কত ঝান্ডা,ফ্লেক্স বেরুবে, সেখানে গিয়ে দেখো কত অস্ত্র, বোমা মজুত রয়েছে।
ভোটের দিন এসে গিয়েছে বাবা! বিপ্লব করতে লাগবে তো!
আমি টুকুনকে দেখি আর ভাবি!
বাতাস ডেকে বলে,
তুই এই মেয়েকে নিয়ে আর কতদূর যাবি?