অবতক খবর,চাঁচল:সানু ইসলাম;২৭নভেম্বর: মালদহের চাঁচল মহকুমা এলাকায় রমরমিয়ে চলছে ড্রাগসের ব্যবসা।চাঁচল সদরে হাসপাতালের পরিত্যক্ত আবাসনেই বসছে ঠেক।আর মহকুমার মধ্যে ড্রাগ সরবরাহের খনি হয়ে গেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা। বিহার হয়ে ড্রাগস আমদানি হচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুরের করিয়ালি এলাকায়।সেখান থেকেই ছড়িয়ে যাচ্ছে চাঁচলের বিভিন্ন জায়গায়। মূলত রমরমা ব্যবসা চলছে ব্রাউন সুগার এবং গাজার। এই নেশার কবল থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কিছু যুবকের কাছ থেকে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হরিশ্চন্দ্রপুর এবং চাঁচল থানার বিভিন্ন এলাকায় রমরমিয়ে চলছে ড্রাগসের ব্যবসা।যুব সমাজের মধ্যে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা।ড্রাগসের নেশায় আসক্ত বা সেই নেশা থেকে আসক্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছে এমন বেশ কিছু যুবকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম আমরা। সেই সূত্র থেকে উঠে এসেছে বহু তথ্য। চাঁচলের বিভিন্ন এলাকায় মূলত বিক্রি হচ্ছে ব্রাউন সুগার এবং গাজা।কোথাও বিক্রি হচ্ছে নির্দিষ্ট বাড়ি বা দোকান থেকে।আবার কোথাও ফোন করলেই নির্দিষ্ট স্থানে এসে নেশা দ্রব্য দিয়ে যাচ্ছে পেডলাররা। যে এলাকা গুলোতে ব্রাউন সুগার বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম কলিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের নূরগঞ্জ, চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের সাঞ্জীব,সাহেবগঞ্জ,মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নদীশিক এলাকা,ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভগবানপুর এলাকা।গাঁজার রমরমা ব্যবস্যা চলছে চাঁচল সদর এবং কলিগ্রামের নিমতলায়।মালতিপুর, গোবিন্দপাড়ার বিভিন্ম জায়গাতেও বিক্রি হচ্ছে ব্রাউনসুগার।আরো জানা গেছে চাঁচলের এই এলাকাগুলিতে ব্রাউন সুগারের আমদানি হচ্ছে কালিয়াচক এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কড়িয়ালি এলাকা থেকে।চাঁচল মহকুমার মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুরের কড়িয়ালিতেই সবথেকে বেশি ড্রাগস্ ডিলারদের দৌড়াত্ম্য।সেখানে বেশ কয়েকটি জায়গায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা প্রতি গ্রাম বিক্রি হচ্ছে গ্রাম সুগার।খুড়িয়ালি বাজার,তালগাছি এবং সোনাপুরে চলছে এই ব্যবসা। সেই জায়গা থেকে ব্রাউন সুগার আনছে চাঁচলের পেডলাররা।আবার অনেকে আমদানি করছে কালিয়াচক থেকে।চাঁচল এলাকার মধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর এই মুহূর্তে ড্রাগ ডিলারদের স্বর্গরাজ্য। মূলত দুই ধরনের মানুষ যুক্ত থাকছে এই ব্যবসায়। কিছু মানুষ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মুনাফার লোভে। কিছু মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ার পর এই ব্যবসায় চলে আসছে শুধু নেশা করার জন্য। যেহেতু এই নেশা অনেকটাই ব্যয়বহুল।ব্রাউন সুগারের নেশা করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় তৈরী হয়েছে ঠেক।যেখানে বসেই এই নেশা করছে আসক্তরা।এমনি একটি ঠেকের সন্ধান পাওয়া গেছে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিত্যাক্ত একটি আবাসনে। ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি।আবাসনের ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্রাউন সুগারের নেশার মুল উপকরণ ফয়েল পেপার এবং মোম দেশলাইয়ের কাঠি। ব্রাউনসুগার আমদানির ক্ষেত্রে সরাসরি পেডলাররা যুক্ত থাকছে না।নেশার লোভ দেখিয়ে তারা সাগরেদ বানিয়ে নিচ্ছে আসক্ত কিছু যুবককে। তাদেরকে ব্যবহার করেই চলছে দেওয়া নেওয়ার কাজ। মাঝে মাঝে পুলিশি সক্রিয়তায় অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে ব্যবসা বন্ধ করলেও এখনো অনেকে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ড্রাগসের ব্যবসা করে যাচ্ছে। আবার প্রকাশ্যে একটি বাড়ি থেকে গাজা বিক্রি হচ্ছে কলিগ্রামের নিমতলায়।আসক্তদের কাছে যা দাদীর গাঁজা হিসেবে পরিচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁচলের এক যুবক বলেন, আমি এক সময় ব্রাউন সুগারের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। দীর্ঘ দুই বছর চিকিৎসার পর এখন ঠিক আছি।আমাকে নেশা মুক্তিকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। সেখানে প্রচুর খরচ হয়েছে। এই নেশা বহু মানুষের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে।এখনো আমাদের এলাকার বহু যুবক আসক্ত রয়েছে।এর জন্য আগে পুলিশকে সক্রিয় হয়ে বিক্রি বন্ধ করতে হবে। একবার আসক্ত হয়ে পড়লে আমাদের ভাষায় বলে বেয়ারা উঠেছে।যখন বেয়ারা উঠে তখন ব্রাউন সুগার না পেলে আর মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। সারা শরীর জুড়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব হয়। কোন কিছু খেতে ইচ্ছা করে না।তখন টাকা না পেলেই অনেকে চুরি বা বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। দুই বছর আগে চাঁচলেরই এক যুবক নেশার টাকা না পেয়ে যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছিল। যারা আসক্ত হয়ে পড়ে তাদের যে কি অবস্থা হয় সেটা শুধু তারাই বুঝতে পারে।”