চুপ আছি ছিলাম থাকবো
তমাল সাহা

দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ শল্য যুধিষ্ঠির চুপ ছিল
তারা রজঃস্বলার বিবস্ত্র রূপ দেখছিল

সীতাহরণের সময় বাল্মিকী বশিষ্ঠরা নীরব ছিল
অবশ্য তার কারণ ছিল তারা ছিল মুনি
মৌনব্রত পালন করাই তাদের ধর্ম

উলঙ্গতা দেখা আমাদের অভ্যাস
উলঙ্গতা দেখা আমাদের পরম্পরা হয়ে গিয়েছে
উলঙ্গতার দৃশ্য আমাদের রুচিবিদ্ধ নয়, নয় নিষিদ্ধ

এক দৃশ্য থেকে অন্য দৃশ্যান্তরে আমি চক্ষুষ্মান হয়ে পডি

আদিবাসী কিশোরীটির উলঙ্গ দৌড় আমরা দেখেছিলাম গুয়াহাটির রাজপথে
ওরা কিশোরীটির নিম্ন ষপ্রদেশে লাথি মেরেছিল
কিশোরীটি দৌড়চ্ছিল
সম্পূর্ণ বিবস্ত্র শীর্ণ কালো মেয়েটি দৌড়চ্ছিল
রুক্ষ কেশদামগুলি পতাকার মতো উড়ছিল
বাঁচাও! বাঁচাও! আর্তনাদ শূন্যতার বাতাসে ভাসছিল
কিশোরীটি দিসপুর সচিবালয়ের বেলতলার কাছ থেকে দৌড় শুরু করেছিল
উলঙ্গ দৌড়ে অলিম্পিকে ভারতবর্ষ প্রথম হবার সে কী দৌড়!

মেয়েটির দৌড়তে কোনো অসুবিধে হচ্ছিল না
কারণ তার শরীর রোগা পাতলা ছিল
হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে দৌড়ে যাচ্ছিল।
মেয়েটি কত ঘন্টা দৌড়েছিল?
এক ঘন্টা দু ঘন্টা তিন ঘন্টা!

কিশোরীদের কাছে পারিব না বলে কোন কথা কথা নেই। একবার না পারিলে দেখো শতবার

তখনও আমরা উলঙ্গ দৌড় উপভোগ করেছিলাম
আমরা চুপ ছিলাম

এরপর আমরা কাংরা উপত্যকায় উলঙ্গের বিশ্ব ইতিহাস দেখলাম।
গণধর্ষণের পর বুলেটে ঝাঁঝরা মনোরমার দেহ পড়ে রইলো পাহাড়ি ঢালে

বারো জন উলঙ্গ মা সেনা ব্যারাকের সামনে দাঁড়িয়ে সোচ্চারে বলছে, এই নে আমার ভারবাহী স্তন, খুবলে খা! এই নে আমার যোনিপ্রদেশ, রক্তাক্ত কর— রেপ আস!
বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করল এই উলঙ্গ দৃশ্যময়তার প্রতিবাদ
তখনও আমরা চুপ ছিলাম

উত্তর পূর্ব গোলার্ধের এই ভারতবর্ষে দাঙ্গায় যুদ্ধে উলঙ্গতা ও ধর্ষণের গল্প শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। পার্বত্য দেশে, নদী উপকূলে, সমতল মালভূমি অআরণ্যক সুনিসর্গমালায়
দু-চারটে এসব ছোট্ট ঘটনা আমাদের কাছে জলভাত।
নোবেলজয়ী জ্ঞানপীঠ আকাদামি পাওয়া বুধজনেরা নীরব নিশ্চুপ স্তব্ধতার গান গায়

আমরা চুপ ছিলাম আছি থাকবো
চুপ থাকা আমাদের ধর্ম!