অবতক খবর,নদীয়া,২৯মে:: বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানা এলাকার প্রতাপপুর গ্রামে,৫২ বছর বয়সের এক সহনশীল ব্যাক্তির দেখা মিললো। কথাই আছে,ইচ্ছে থাকলে কি না হয়,এবার সেই ইচ্ছে পূরণ হলো ৫২ বছর বয়সের প্রদীপ হালদারের।
উল্লেখ্য,অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করার কারণে মাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়ার সুযোগ হয়নি প্রদীপ বাবুর, এক প্রকার সাংসারিক চাপে ও পেট বাঁচানোর চিন্তায় দিন মজুরের কাজ বেছে নিতে হয় তাকে। ছোটো বেলা থেকেই ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল, এই জন্য এলাকার মানুষ উপহাস করতেও ছাড়েননি তাকে,কেউ কেউ তো আবার তাকে রাস্তায় দেখলেই বলতো, ওই দেখ ডাক্তার বাবু যাচ্ছেন। তখন তিনি তার মনের কষ্ট মনেতেই চেপে সেখান থেকে বেরিয়ে যেত, তবে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেও তার মন থেকে ডাক্তার হওয়ার জেদ সে কখনোই বার করেননি। এরপর কোনো প্রাইভেট টিউশন ছাড়াই ২০০০ সালে বিজ্ঞান শিক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর কিছু পুরাতন বই কিনে পড়া শুরু করেন, জয়েন্ট এন্ট্রান্সে বসার জন্য।
হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ও সাংসারিক চাপে পড়ে ,একটা সময় সে তার স্বপ্ন গুলো ভুলে যায়,বেশ কিছু বছরের জন্য। তারপর বিয়ে করে সংসার পাততে বাধ্য হয় ও সেই সংসারে তার দুটি সন্তান ও হয়। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে সে তার সন্তানদের পড়াশোনা জারি রাখে,শুধু তাই নয় তার সন্তানদের সাথে সে নিজেও নিয়মিত ভাবে পড়তে বসে,যা দেখে তাঁর স্ত্রী তাকে পাগলের প্রলাপ বলে কটাক্ষ করে ,তবে কে কার কথায় কান দেয়। ধীরে ধীরে তার জেদ আরো বেড়ে যায় ,সেই জেদ থেকেই সে শপথ নেয় তাকে এগোতেই হবে। তারপরেই এক নতুন ইতিহাস,প্রদীপ বাবু এবার উর্তীন্ন হলেন জয়েন্ট এন্ট্রান্সে। টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে তার ডাক্তারি পড়া হবে কি না তা জানা নেই, তবে যারা এতো দিন তাকে কটাক্ষ করতো তারাই এখন তাকে বাহবা দিচ্ছেন।
আজ এপার বাংলা সহ ওপার বাংলার মানুষের মুখে মুখে তার নাম। তিনি এমবিবিএস পাশ করার চেষ্টা করেছিল,সুযোগ হয়নি। তবে হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ তো আছে, আর সেখানেই সুযোগ পেয়ে সে এবার তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষে। অবশেষে ২০২১ সালে নিট পরীক্ষায় বসেন এবং সকলকে চমকে দিয়ে পাশ করেন। তার নেট রাঙ্কিং ৩৪৬,২৩৪। হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এতো বয়সের কাউকে মেডিক্যাল পাশ করতে দেখিনি ,কিন্তু প্রদীপ হালদার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে যেভাবে পাশ করেছেন, তাতে আমি যথেষ্ট খুশি, আর প্রদীপ হালদারের কথায় সে এমবিবিএস হতে পারলো না তো, তাতে কী ? হোমিওপ্যাথি ডাক্তারতো বলতে পারবো। আমরাও চাই তিনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক হোক,তার পরিবারে কষ্ট দূর হোক।
তাঁর এহেন প্রচেষ্টাকে আমরা সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকেও কুর্ণিশ জানাই।