অবতক খবর,৪ সেপ্টেম্বর, মালদা:- জেলায় ‘‌শিক্ষারত্ন’‌ সম্মান পাচ্ছেন জয়দেব লাহিড়ী। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর থেকে তাঁর এই বিশেষ সম্মান পাওয়ার চিঠি এসে পৌঁছেছে। এই খবরে খুশি জেলার মানুষ। ইংরেজবাজার শহরের বিএস রোড এলাকায় বাড়ি তাঁর। তিনি ডাল্লা চন্দ্রমোহন বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার স্কুলে পড়ুয়াদের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়।

নিজের স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে বাল্যবিবাহ রোধে তিনি জেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ১৯৯৯ সালে ডাল্লা চন্দ্রমোহনে সহ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এসএসসি-‌র প্রথম ব্যাচ তিনি। শুধু তাই নয়, মেধাতালিকাতেও প্রথমে ছিলেন তিনি। এরপর প্রধান শিক্ষক পদের পরীক্ষাতেও প্রথম র‌্যাঙ্ক করে ২০১০ সালে নিজের স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর স্কুলের ভোল পাল্টাতে থাকে।

তাঁর স্কুলটি সীমান্তবর্তী এলাকায়। ফলে সেখানে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ হয়ে থাকে। তিনি সবার আগে পড়ুয়াদের বুঝিয়েছিলেন, স্কুলই তাদের নিরাপদ জায়গা। পড়ুয়ারা যাতে নিজেদের দু:‌খ, কষ্ট নির্দ্ধিধায় শিক্ষক-‌শিক্ষাকাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে তার দ্বার খুলে দেন সবার প্রথমে। এরপর অভিভাবকদের সচেতন করে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের কাজে এগিয়ে যান। শিক্ষক-‌শিক্ষাকা, এমনকি পড়ুয়াদের নিয়ে বেশ কিছু বাল্য বিবাহ রোধের কাজ করেন। পাশাপাশি বন্যার ত্রাণ দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয় নিজেদের উদ্যোগে।

এই কর্মসূচি চলতেই থাকে। লকডাউনেও শিক্ষক-‌শিক্ষিকা, পড়ুয়াদের নিয়ে দু:‌স্থদের রান্নাকরা খাবার বিলির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। স্কুলের উদ্যোগে চলে রক্তদান শিবিরও। পাশাপাশি লিঙ্গবৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। স্কুলের সরস্বতী পুজোয় পুরুষ পুরোহিতরাই পুজো করে থাকেন। তিনি সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে স্কুলের এক আদিবাসী ছাত্রীকে দিয়ে সরস্বতী পুজো করান। পাশাপাশি স্কুলের অব্রাহ্মণ শিক্ষককে দিয়ে টানা সরস্বতী পুজো করিয়ে আসছেন।

‘‌শিক্ষারত্ন’‌-‌এ মনোনীত জয়দেব লাহিড়ী বলেন, ‘‌এই সম্মান কাজে আরও উৎসাহ বাড়াবে। সমাজ ছাড়া স্কুল চলতে পারে না। তাই সমাজের জন্য আরও কিছু করার রয়েছে। আর পড়ুয়াদের পাশে থেকে এভাবেই কাজ করে যেতে চাই।’‌