আজ সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর জন্মদিন

তমুকে রীতিমতো রেগে বকুনি দিয়েছিল ঋজুদা

তমাল সাহা

তমু রীতিমতো বকুনি খেলো শেষ পর্যন্তৃ। অনেক কাকুতি-মিনতি এবং অনুরোধ সত্বেও তিনি দার্ঢ্য গলায় বললেন, না, ইন্টারভিউ দেবো না।

তখন সম্পূর্ণ পরাজিত হয়ে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে রইলো তমু।

মানুষ মরে গেলে খণ্ড-খণ্ড হলেও ভেসে ওঠে পুরাতন চিত্র-দৃশ্যাবলী। হয়তো বা কোনোভাবে কোনোক্রমে এসবের সঙ্গে জড়িয়ে যায় তমু। জীবনের জলপ্রপাতে তমু সেইসব শব্দ-ধ্বনি শুনতে চায়। টুকরো টুকরো ঘটনার স্মৃতি তখন সরব হয়ে উঠতে চায়, জানান দিতে চায় মানুষের কাছে।

হলো তখন তমু সরাসরি তাঁর কাছে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল, একটু, একটু সময় দিন। মানুষটি তমুর দিকে তাকিয়ে বললেন, শরীর ভালো নয়। তাড়া আছে। তমু তার কথা থামিয়ে বারবার বলে চললো, একটু, একটু সময় দিলেই হবে।

এবার তিনি রীতিমতো রেগে বকুনি দিলেন, বলছি না, পারব না। তমু ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এল। হিমাদ্রিরও এতে মন খারাপ হয়েছিল।

সেই মানুষটির কথা মনে পড়ে গেল তমুর। তিনি চলে গেলেন ২৯ আগস্ট,২০২১, রবিবার। তখন রাত ১১টা ২৫। তিনি এখানে এসেছিলেন পরিভ্রমণে ২৯ জুন,১৯৩৬।

তিনি হলেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ।

তমু তাঁকে সামনে রেখে আজ কিছু শব্দ সাজালো।

ঋজুদা চললে কোথায়

ঋজুদার সঙ্গে যে যায়নি জঙ্গলে

সে আর কি করে জানবে প্রকৃতি

চিনবে কি করে অরণ্যরাজি?

একটু উষ্ণতার জন্য যে নগ্ন নির্জনে

হলুদ বসন্তে হাত রাখেনি

সে কি জানে ভালোবাসার?

সবিনয় নিবেদন-এ চিঠির পর চিঠি

প্রেমপত্র হতে হতে শেষপর্যন্ত

পাখি পাখিনীর মতো স্বাধীন উড়াল দেয়

এসব সে জানতো।

কোজাগরে কে বা কারা জেগে থাকে

জীবন যুদ্ধের চেতনায়, সে বলে যায়।

সংসার কখন পুতুল খেলা

সে আমাদের জানিয়ে দেয় আর বলে, নিজেকে ভালবাসতে প্রতিদিন একবার আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়।

যে যতই যা লিখুক তার অক্ষর দিয়ে সাজানো শব্দমালার উপন্যাস যে পড়েনি সে কি কখনো কৈশোরের উত্তরণে স্পর্ধিত যৌবনকে

স্পর্শ করতে পারে!

মাধুকরী আসলে কি?

দোরে দোরে যাওয়া এবং কি জন্য—

এতে মধু সংগ্রহের কোন জীবন রসদ আছে

হয়তো তারই অনুসন্ধানে এবার ঋজুদা পর্যটক থেকে পরিব্রাজক হয়ে গেল

লুকিয়ে পড়লো আরো কোনো ঘনতম গভীর অরণ্যে!