অবতক খবর , রাজীব মুখার্জী, হাওড়া :: পঞ্চায়েতে দলীয় নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ভাঙচুর করা হলো পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ি।গতকাল হাওড়ার পাঁচলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুজিবর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর চালায় একদল দুষ্কৃতী। অভিযোগের তির শাসক দলেরই বিরুদ্ধে। আমফান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় ৮০% নাম ভুয়ো এই মর্মে জেলা শাসকের দফতরে একটি চিঠি জমা দেন পাঁচলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মুজিবর রহমান। এবং তার পরেই ঘটলো এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা।
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল রাতে। জনা কয়েক দুষ্কৃতি গতকাল রাতে হামলা করে ওই পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে। গোটা বাড়িতে তারা তান্ডব চালায়। ভাঙচুর করা হয় বাড়ির জানলার কাঁচ থেকে শুরু করে আসবাব পত্র। চুরি যায় সোনাদানা অব্দি। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে স্থানীয় তৃণমূলের কিছু সদস্যরা পঞ্চায়েত প্রধানের বিষয়ে একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের আলোচনা মূলত তাকে সমালোচনা করার জন্যই ডাকা হয়েছিল। ওই বৈঠক থেকে তাকে রীতিমতো শাসানো হয়। ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান দীর্ঘদিন ধরেই এলাকা ছাড়া। সে এলাকায় ফেরার কথা শুনেই ওই বৈঠক ডাকা হয় বলে তৃণমূলের অভ্যন্তরে সূত্রের খবর। এবং সে এলাকায় ফিরলে তার গর্দান যাবে বলেও শাসানো হয়। এরপরেই গতকাল তার বাড়ি ভাঙচুর করে একদল দুষ্কৃতি।
এই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান জানান গত পরশুদিন পাঁচলার বিধায়ক গুলশান মল্লিকের বাহিনী একটি বৈঠক করে। সেই বৈঠকে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি আরো দাবি করেন গত ২ বছর যাবৎ তিনি বাড়ি ছাড়া। তাকে গুলোশ মল্লিক বারবার চাপ দিচ্ছে যাতে তিনি প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার আরো দাবি তিনি জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সাথে আছে। কিন্তু স্থানীয় বিধায়ক যাকে অঞ্চল সভাপতি করেছে সেই মেমবুব আলম ২০১৩ সাল অব্দি সিপিএম করতো। যারা পুরানো তৃণমূল করে তাদেরকে বের করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন তার বাড়ি ফেরার আগে এলাকায় একটা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরির জন্যই এই হামলা করা হয়েছে। ১৫ ই অগস্টের দিন সে বাড়ি ফিরবে শুনে এই ঘটনা ঘটানো হলো। তিনি জানান তিনি এই ঘটনার বিষয়ে জেলার সভাপতি লক্ষ্মী রতন শুক্লা ও দলের জেলার কো- অর্ডিনেটর রাজীব ব্যানার্জিকে জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে দল ও প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। প্রধানের স্ত্রী আবিরা বেগম জানান গতকাল স্থানীয় তৃণমূলের গুন্ডারা এসে তার বাড়ি ভাঙ্গচুর করে। তার স্বামী গত দু বছর ধরে এলাকা ছাড়া।
পাশাপাশি তিনি আরো অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা রাস্তায় বেরোলেই তাদেরকে গালিগালাজ করা হয়।
যদিও এই বিষয়ে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিরোধী পক্ষ। তাদের দাবি মুজিবর রহমানের পরিবারের লোকেরা নিজেরাই তাদের বাড়ি ভাঙচুর করে তাদের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত হাওড়ার পাঁচলা গ্রাম পঞ্চায়েতে আমফানের ক্ষতিপুরনের টাকা নিয়ে দুনীতির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান নিজেই। তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন আমফানের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দের জন্য তৈরি গ্রাম পঞ্চায়েতের তালিকায় ৮০% ই দুনীতি হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিজেই। এই মর্মে হাওড়ার জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান মুজিবুর রহমান। মোট ১১৭ জনে লিস্ট পাঠানো হয় জেলা শাসকের কাছে। দেখা যায় তার মধ্যে ২৮ জনের নামই ভুয়ো। এখনো ৪০ জনের ক্ষতিপূরণের টাকা ঢোকে নি।