অন্য দুর্গা– সাত
দেবীপক্ষের আগেই পুজো শুরুঃ
পটেশ্বরী ও অস্ত্র পূজা
তমাল সাহা
দুর্গাপুজো বাঙালির কাছে নস্টালজিক। কত রকমের যে দুর্গা আছে! আর তার নামেরও অন্ত নেই। সেই নামে বিভিন্ন সৌন্দর্য এবং বৈশিষ্ট্য বর্তমান।
ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর রাজবাড়ীর পুজো এক বিশেষ পুজো। দেবী এখানে পাটেশ্বরী। পটে আঁকা ছবিতেই দেবী পূজিতা হন। পুজোর সূচনাপর্বে অত্যন্ত শ্রদ্ধা-ভক্তিভরে অস্ত্র পুজো করা হয়। রাজবাড়ির পুজো রাজশক্তির সঙ্গে অস্ত্রশক্তি জড়িত। খুব সম্ভবত এই কারণে এখানে অস্ত্র পুজোর প্রাধান্য।
উল্লেখযোগ্য আরেকটি দিক, এখানে পুজোর আগেই পুজো শুরু হয়ে যায়। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে রাজবাড়ির মঙ্গল ঘট নিয়ে আসা হয় কূলদেবী সাবিত্রী মন্দিরে৷ মন্দিরে রয়েছে গর্ভগৃহ। সেখানে রয়েছে পটে আঁকা মাতৃমূর্তি। এ এক ঐতিহ্যময় শিল্প। এখানে পটুয়ার হস্ত ষশিল্প নিশ্চিতভাবে সম্মানিত। এখানে পুজোর রীতির বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মা এখানে পটেশ্বরী দুর্গা। জীতাষ্টমী তিথিতে অর্থাৎ কৃষ্ণ নবমীর আগের দিনে এখানে মায়ের বেলবরণ ও বোধন হয় সন্ধ্যায়। এখানে বেলগাছ তলায় মঙ্গলঘট স্থাপন করা হয়।
এক হাজার ষোল বঙ্গাব্দে এই পুজো শুরু হয়েছে বলে ধারণা। এবার ২০২১ সালে এ পুজো চারশো-তম বর্ষ। মূল রাজবংশের কূলদেবী সাবিত্রী। এই মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে দুর্গামন্ডপ বা চন্ডীমন্ডপ। রাজ পরিবার থেকে খড়্গ এনে বেলগাছের তলায় নবপত্রিকা সহ পুজো শুরু হয়। তারপর অধিবাস রীতি পালন করে মন্ডপে আনা হয়।
দেবীপক্ষের আগেই পুজো শুরু কেন? জনশ্রুতি গড় ঝাড়গ্রামের রাজা ছিলেন জঙ্গলীমাল। তাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন রাজপুতানার সর্বেশ্বর। মঙ্গল কামনায় ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ইন্দ্রাভিষেক অর্থাৎ জীমূতবাহন ইন্দ্রের পুজো করা হয় শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। জীতাষ্টমীর পরদিন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অস্ত্রপুজার মাধ্যমে পুজো শুরু করা হয়।
ষষ্ঠীর রাতে বোধনের পর সপ্তমীর দিন সদলে রাজবাড়ী থেকে খড়্গ শালগ্রাম মন্দিরে আনা হয়। দশমীর দিন সর্বজনহিতায় কামনার মাধ্যমে পুজো শেষ হয়। এ পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য বিজয়া দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন চণ্ডীপাঠ ও হোম চলে।