নৈহাটী গাঙ্গেয় জলপ্রবাহের উপকূলে জন্মেছিলেন মহান এই চিত্রশিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। আজ তার জন্মদিন।
অবকত–এর বিশেষ প্রতিবেদন
ইনি সেই চলমান চিত্রশিল্পী জীবনের সাদাকালো আঁকতে যিনি তুলি কলম নিয়ে পথেঘাটে,গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াতেন। শ্রমিকের যাপিত জীবন তুলে ধরতে শ্রমিক মহল্লায় আন্ধেরিতে আস্তানা নিয়েছেন। অনাহার, মন্বন্তরের ছবির আঁকতে দুর্ভিক্ষপীড়িত মেদিনীপুর চলে গিয়েছেন, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ছবির আঁকতে ঝুঁকি নিয়ে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন, শ্রমিক আন্দোলনের ছবির আঁকতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ শ্রমিককে আগলে রেখেছেন।
রাজনীতিতে সক্রিয়, নিপীড়িত, মেহনতি মানুষের পক্ষে এমন সোচ্চার জিদ্দি শিল্পী ভারতে দ্বিতীয় নেই। তার সময়ে সোমনাথ হোর নবীন সহযোগী শিল্পী।
আমাদের অহংকার তিনি আমাদের সংলগ্ন অঞ্চল নৈহাটীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।
জীবন যখন সাদাকালো
তমাল সাহা
চিত্রশিল্পী– হাতে থাকবে রং ও তুলি
সে আবার হবে কেন রাজনৈতিক ?
ক্রমান্বয়ে তুমি হয়ে উঠলে ঐতিহাসিক।
প্রশ্ন উঠেছিল তোমার চিত্রসমূহ আঁকায়
তাহলে তো সামাজিক দায় বেড়ে যায়!
তোমার চিত্রে উঠে আসে হাঙ্গার-ক্ষুধা
তোমার চিত্রে উঠে আসে শোষিতের ছবি
তাহলে তুমি তো
জীবন চিত্রী এক আক্ষরিক কবি!
তোমার চিত্রে উঠে আসে শ্রমজীবী কারিগর
আন্ধেরি শ্রমিক মহল্লায় যাপিত জীবন–
গড়ে ওঠে তোমার আশ্চর্য ঘর।
আর কি আসে ছবিতে তোমার?
রীতিমত রাজনৈতিক পোস্টার।
সাদাকালো-জলরংয়ে তুমি তো মাস্টার!
শিল্প ও জীবন এভাবে হয় একাকার
আন্দোলনে সক্রিয় শিল্পী তুমি বারংবার।
কোনোদিন গুলিবিদ্ধ শ্রমিককে
জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি
সে কথা কি ভুলতে পারে প্রিয় জন্মভূমি!
মনে পড়ে
জনযুদ্ধ-এ তোমার তুলিতে সোচ্চার
একের পর এক বাস্তব ড্রয়িং ও কার্টুন।
তুমি নিজেই তুলে ধরেছ সময়ের ফেস্টুন।
পুলিশ আবার বই কেনে নাকি ?
তোমার সেই ‘হাংরি বেঙ্গল’ ডায়েরি—
ছবি ও লেখা সম্বলিত অভিজ্ঞতার ফসল
প্রকাশিত হতেই শাসক কিনে নিল কপি সব।
তারপর রাষ্ট্রীয় দাপটে সমস্ত কপি ভস্মীভূত,
পড়ে রইলো শুধু ছাইয়ের শব।
নৈহাটি, তুমি জন্মেছিলে ভাগীরথীর তীরে জলপ্রবাহের পাশে।
আজ স্মৃতির সরণি বেয়ে তোমার কথা মনে আসে।