অবতক খবর,১৭ জুলাই,মলয় দে নদীয়া :-গোটা রাজ্যের সাথে শান্তিপুরেও চলছে হকার উচ্ছেদ অভিযান। মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য বিরক্তিপ্রকাশের পর, কে বেশি দড় তা প্রমাণের যেন প্রতিযোগিতা লেগেছে এমনই অভিযোগ জনউদ্যোগ সংঘঠনের । কলকাতা থেকে শুরু হয়ে মফস্বলে শহরে চলছে, প্রশাসনের ভাষায়, দখলমুক্তির অভিযান। অথচ ক’দিন পরেই মুখ্যমন্ত্রী একমাস সময়ের কথা বললেন।

শান্তিপুরে দিন দশেক আগে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করে ফুটপাথ খালি করে দেওয়ার জন্য বলা হয়, তারপর পুরসভা খালি করতে নামবে।

পুরসভার কর্তাব্যক্তিরা সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন যে যারা নিজেরা সরে যাবেন, তাদের জন্য পৌরসভা ভাববে, কিন্তু যারা যসবে না, পুরসভা তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করবে। পাশাপাশি পুরসভার কর্তাব্যক্তিরা এবং এমনকি বিরোধী বিজেপির কাউন্সিলররাও একসাথে গিয়ে হকারদের উঠে যেতে বলেন। এর বিরুদ্ধে কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক কণ্ঠস্বর না উঠে আসায়, এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের ভূমিকাও হতাশাব্যঞ্জক হওয়ায়, হকাররা ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা চালান, কিন্তু তার কথা শুনবার জন্য কাউকে পান না। তখন তারা নিজেরা দোকানের ছোট পুঁজি বাঁচানোর জন্য নিজেরাই সরে যেতে শুরু করেন। এই ঘটনা শান্তিপুর জনউদ্যোগকে নাড়া দেয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা ।

হকার দের পাশে থেকে জনউদ্যোগ সিদ্ধান্ত নেয়, সোমবার তারা পুরপতির সাথে দেখা করে জানতে চাইবে যে, এই উচ্ছেদ অভিযানের জন্য কোন লিখিত সরকারী নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত আছে কিনা?
পুরপতির সাথে দেখা করলে তিনি বলেন তাঁরা বিকল্পের চেষ্টা করছেন, কিন্তু কোন লিখিত নির্দেশ তিনি দিতে পারেননি। এরপর সেখান থেকেই তারা এসডিও, রাণাঘাটের সাথে দেখা করতে জান । গিয়ে জানা যায়, তিনি ছুটিতে আছেন।

তখন এক আধিকারিকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, তিনিও কোন লিখিত নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত পাননি। এরপরই শান্তিপুর জনউদ্যোগের পক্ষ থেকে এসডিও-র কাছে মেমোরাণ্ডাম দিয়ে আসা হয়, দাবী রাখা হয়

১) এ ব্যাপারে সরকারী লিখিত নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত থাকলে তা জনসমক্ষে আনতে হবে,

২) লিখিত নির্দেশ বা লিখিত সিদ্ধান্ত না থাকলে, অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখতে হবে।

এই মেমোরাণ্ডাম দিয়ে ফিরবার খানিকক্ষণ পরেই পুরসভার থেকে ফোন করে আমাদের জানানো হয় যে এই নির্দেশ আছে, তখন কপি চাইলে বলা হয়, ওখানে ভেণ্ডিং জোন, কমিটি ইত্যাদির কথা আছে, মিটিং করার পর আমাদেরকে দেওয়া হবে। ততদিন অভিযান স্থগিত থাকবে কিনা জানতে চাইলে কোন স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সদস্যরা । এরই পরে কালনা থেকে খবর আসে, যে সেখানকার এসডিও জানিয়েছেন, বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তবেই উচ্ছেদে নামা হবে।

এই নিয়ে জনউদ্যোগের বক্তব্য জনসমক্ষে রাখার জন্য আজ সোমবার শান্তিপুর পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে ভগ্নস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে পথসভা করে, আমাদের বক্তব্য হাজির করা হয়। বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ নয়, হকারদের সাথে আলোচনা করতে হবে, লকডাউন পরবর্তী কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এই উচ্ছেদ অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক এই বক্তব্য রাখা হয়।

ওলগা টেলিস মামলা থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায় উল্লেখ করে জীবনের অধিকার যে রুজি-রোজগারের অধিকারের উপর নির্ভরশীল এ কথা তুলে ধরা হয় এবং street vendor act 2014 -র কথা উল্লেখ করে বক্তারা বক্তব্য রাখেন।

বহু মানুষ, হকার এই বক্তব্য দীর্ঘক্ষণ ধরে শোনেন। পথ পথচারীর জন্য সুগম করার পাশাপাশি হকারদের কথাও ভাবতে হবে একথা জানিয়ে রুজিরোজগারের একমাত্র পথ যারা হারাতে চলেছেন তাদের পাশে থাকার জন্য মানুষের কাছে আহ্বান জানানো হয়। পুরসভাকে আহ্বান জানানো হয় অভিযান বন্ধ রাখার।

শান্তিপুর তথা রাজ্য জুড়ে অমানবিকভাবে ফুটপাতের ধারের ছোট দোকানি ও হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে গতকাল পাবলিক লাইব্রেরীর সামনের প্রতিবাদ সভার পর, শান্তিপুর রেলবাজারে দ্বিতীয় প্রতিবাদ সভাটি অনুষ্ঠিত হ’ল জন উদ্যোগ সংগঠনের ।

পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নয়, এই মূল দাবীকে সামনে রেখে প্রচার চলে। আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জীবন তথা রুজি-রোজগারের অধিকার, বড় ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন এবং এর প্রতিবাদে সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বক্তাদের কথায় উঠে আসে।

সভার শেষে উচ্ছেদ হওয়া ছোট দোকানিরা এসে জনউদ্যোগের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন। আগামীতে জনউদ্যোগ তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।