অবতক খবর , বিজু , বর্ধমান :- মেদিনীপুরে সোমবারের সভায় নিজের আক্রমণ যেখানে শেষ করেছিলেন, মঙ্গলবার বিকালে আসানসোলের রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজবাড়ি ময়দানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রশাসনের সভায় সেখান থেকে আরো চড়া মেজাজে শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
আসানসোল রানিগঞ্জে কয়লা মাফিয়া প্রসঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে সোমবারের উত্তরকন্যা অভিযানে বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় এদিনের সভা থেকে সরাসরি নরেন্দ্র মোদির দলকে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইভাবে রেলের বেসরকারিকরণ থেকে ইসিএলের কয়লাখনি বন্ধ, বিএসএনএল বন্ধ, ব্যাঙ্কের সদরদপ্তর বাংলা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে।
তিনি দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলিকে বিক্রি, বন্ধ ও বেসরকারিকরণ করার প্রতিবাদ জানিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সহ বাংলার সব স্তরের নেতাদের লাগাতার আন্দোলন করার ডাক দিয়েছেন। তিনিও নিজেও আন্দোলন করতে রাস্তায় নামবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিন রানিগঞ্জের সভা দুপুর একটার সময় শুরু হবে বলে ঠিক ছিলো। কিন্তু এদিন কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন ভারত বনধের ডাক দিয়েছিলো। তা ছিলো বিকেল তিনটে পর্যন্ত। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশে সভার সময় দু’ঘন্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
তাই এদিন মুখ্যমন্ত্রী সভায় আসেন তিনটের পরে। ৪০ মিনিটের ভাষণে তিনি আগাগোড়াই আক্রমনাত্বক ছিলেন।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজেই সভার সময় পেছোনোর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আজকের দিনটা আলাদা। দেশের কৃষকরা নিজেদের জমি বাঁচাতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। তারা কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এদিন তিনটে পর্যন্ত বনধ ডেকেছেন। আমরা সরকারে আসার পরে বনধ বা ধর্মঘট করিনি।
যে আন্দোলন করবে, তাকে আমরা সমর্থন করবো কিন্তু কৃষক ও চাষীরা যে দাবিতে এদিন ভারত বনধ ডেকেছেন তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে, এটাকে আমরা সমর্থন করেছি। তৃনমুল কংগ্রেসের কৃষকদের এই আন্দোলনে ছিলো, আছে ও থাকবে। কৃষক আমাদের গর্ব। শ্রমিক আমাদের সম্পদ। আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে আছি। তারা যে আন্দোলন করবে, তাকে আমরা সমর্থন করবো। আমি নিজে সিঙ্গুরের কৃষি জমি বাঁচাতে আন্দোলন করেছিলাম। ২৬ দিন অনশন করেছিলাম।
আমরা কৃষকদের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্প করেছি। কৃষি জমির খাজনা ও মিউটেশন ফি আমরা মকুব করেছি। সেগুলো নেওয়া হয় না। রাজ্য সরকার দুয়ারে সরকার করছে। যেসব কৃষক এখনো কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় আসেননি, তারা নিজেদের জমির কাগজ নিয়ে চলে যান। সেলফ এ্যাটেসটেড করে দরখাস্ত জমা দিন। হয়ে যাবে। বিএলএলআরওদের বলছি কাউকে ঘোরাবেন না। করে দেবেন। কেউ মিথ্যা বললে তো, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার তো রাস্তা আছে। জেলাশাসকদের বলছি, আপনারা বিষয়টি দেখবেন। এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, বিজেপি ঝড়ের বেগে কুৎসা ও অপপ্রচার করে। আমরা তা করিনা। আমরা ঝড়ের বেগে কাজ ও উন্নয়ন করি। নিজেরা মিছিল করে দলের কর্মীকে গুলি করে মেরে বলছে, পুলিশ মেরেছে। জানা উচিত পুলিশ ছড়রা ব্যবহার করে না। বিজেপি নিজেরাই গুলি করে মেরে, এখন প্রচার ও প্রোপাগাণ্ডা নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা দাঙ্গা করিনা। ঘর জ্বালাইনা। আমরা কাজ করি।
কোল মাফিয়ারা তো বিজেপির সঙ্গে আছে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় বলেন, এখন খুব কোল মাফিয়া কোল মাফিয়া বলছে। ইসিএলের কয়লাখনি বন্ধ করে দিচ্ছে আর এইসব বলে বেড়াচ্ছে। কোল মাফিয়ারা তো বিজেপির সঙ্গে আছে। কয়লা তো কেন্দ্র সরকারের। তারা কি করছে? কয়লাখনিতে তো সিআইএসএফ পাহারায় থাকে। তারা কি করে? সেটা তো রাজ্য সরকার বা রাজ্যের পুলিশ দেখেনা। নির্বাচনের সময় এলেই বিজেপি দলটা এইসব করে ও বলে বেড়ায়। তারপর আর তাদের দেখা যায় না। এমপি তো আসানসোল থেকে জিতেছেন। তিনি কোথায়? তাকে কি দেখা যায়। তার কাছ থেকে আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া কি পেয়েছে? কেন্দ্র সরকার তো রুটি রোজকার বন্ধ করে দিচ্ছে। দেশ তো সবার। ঐ দলটা ভোটের সময় টাকা নিয়ে আসে আর সবাইকে দেয়। আপনারা কেউ তা নেবেন না।
এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আসানসোল রানিগঞ্জে পুর্নবাসন প্রকল্পে তৈরী আবাসন ধস কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বাসিন্দাদের হাতে চাবি তুলে দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রকল্পে ২৯ হাজার আবাসন তৈরী করা হবে। আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডা, রাজ্য সরকারের হাউজিং বিভাগ ও জেলা প্রশাসন তা করছে। ফেজে ফেজে তা করা হবে।
প্রথম ফেজে অন্ডাল, জামুড়িয়া ও বারাবনিতে ৯২৩২ জনকে দেওয়া হবে। এদিন ৩৫৮৪ জন পেলো। বাকিরা শীঘ্রই পেয়ে যাবে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু আবাসন তৈরী করলে তো হবেনা। সেখানে জল ও লাইটেরও ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, করোনার জন্য গত কয়েক মাস তো সব বন্ধ ছিলো। তারমধ্যেও জেলা প্রশাসন মাইগ্রেন্ট লেবার এনে আবাসন তৈরীর কাজ করেছে।
তারজন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ। আমরা সরকারে আসার পরে এইসব এলাকার বাসিন্দাদের কথা ভেবেছি।। রানিগঞ্জ এলাকা তো এক্সিডেন্ট প্রোন। প্রতি পদে পদে এখানে বিপদ। ধস নামলে কয়েক হাজার মানুষ বিপদে পড়বেন। পুনর্বাসন একটা বড় দিক। আমরা জমি দিয়েছি। বাকিটাও সব দেবো। আমরা এই এলাকার মানুষদের সঙ্গে আছি।