বিশ্ব সুখী দিবসে মনসৃজার সঙ্গে
তমাল সাহা
কাল ছিল পূর্ণিমা রাত। অজস্র জ্যোৎস্না ছিল আকাশের গায়ে। সেই আলো ছড়িয়ে ছিল পৃথিবীর ঘাসে। রঙের উল্লাসে ভেসে গিয়েছে পরিবেশ। তোমার মুখে এখনো সুগন্ধি আবির সোহাগের আবেশ।
সকালে উঠে চা দিয়ে গেলে। গালে দিয়েছো হাতের ছোঁয়া। আমি দেখি মনসৃজার মুখ। তুমি বলো, আজ কিন্তু বিশ্ব সুখী দিবস। পৃথিবী জুড়ে আশ্চর্য সুখ!
আমি বলি, আজ! মানে একদিন সুখী দিবস? বাকি দিন তবে কি অসুখী? তুমি চোখ তুলে দাঁড়িয়ে আছো আমার মুখোমুখি।
আজ বিশ্ব সুখী দিবস। কাল মারিউপোল ড্রামা থিয়েটারে বোমারু বিমান দিয়েছে হানা। উড়ে গেছে ছাদ, কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠেছে কালো ধোঁয়া। কাগজে দেখি শিশুরাও ছিল, নিহত তারা– মাটিতে শোওয়া!
আজ বিশ্ব সুখী দিবস। ফুটপাতে শুয়ে আছে শিশু-বালক। মাথায় কুড়িয়ে পাওয়া রঙঠেকানো টুপিতে সাজানো পালক।
কাল শহর জুড়ে বসন্ত উৎসবের মেলায় সে মাগনায় পেয়েছিল খাবার– দুটি দই বড়া, একটি পেঁচানো জিলিপি। সেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মাথার উপরে ছিল চাঁদের চাকতি থালার মতো। এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। আজ কি খাবে জানেনা সে অতশত।
আজ বিশ্ব সুখী দিবস। কলকারখানায় লকআউট। কামগার কোথায়? ভাঙা চিমনির মাথায় কাল দেখা গেছে ঝুলন্ত হোলি-চাঁদ. বস্তির পাঁচালিতে এখন সেই শোরগোল, নেই ছাতু খাওয়া ঘুম পুরোপুরি বরবাদ।
আজ বিশ্ব সুখী দিবস। কাল সবুজ আবির খেলেছে বেরোজগারে অগণন তরুণ। ভোটে জিতে কাউন্সিলার দাদা খরচাপাতি দিয়েছে– হোলি হ্যায়!পেটে পড়েছে তরল আগুন।
আমি পূর্ণিমা চাঁদ জোৎস্নার কথা যত পড়ি কবিতায়, অমাবস্যা তিথির কথা তেমন পাইনা। আমি মনসৃজার সঙ্গে কৃষ্ণপক্ষের কথা বলি। আজ বিশ্ব সুখী দিবস। ওর সঙ্গে কথা বলে কাটাই প্রহরগুলি। আমি ওর চোখের ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।ও তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। সুখী হয় কিনা জানিনা প্রতিধ্বনি’ হয়ে ফেরে শব্দাবলী।