অবতক খবর, ২২ মার্চ: ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর থেকেই গোটা বীজপুর জুড়ে অবতক-এর পক্ষ থেকে এক গোপন সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।

এই গোপন সমীক্ষায় আমরা বীজপুরের সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের কাছে তিনটি প্রশ্ন রাখি।
প্রথম প্রশ্ন,
বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শুভ্রাংশু রায়কে কেন মানুষ আর চাইছেন না? তিনি তো উন্নয়ন করেছেন,এই অঞ্চলে এবং আশেপাশের অঞ্চলেও তিনি উন্নয়নের কান্ডারী বলে স্বঘোষিত।

দ্বিতীয় প্রশ্ন,
কেন মানুষ সুবোধ অধিকারীকে বীজপুরের বিধায়ক হিসেবে দেখতে চাইছেন? তিনি তো রাজনীতিতে এসেছেন খুব বেশিদিন হয়নি। অন্যদিকে তিনি রাজনৈতিক পরিবার থেকেও আসেননি।

তৃতীয় প্রশ্ন,
বীজপুরের নেতারা সুবোধ অধিকারীর সঙ্গে আছেন না নেই? তাঁর সাথে থাকা বা না থাকার পেছনে কারণ কি?

এই তিনটি প্রশ্ন নিয়ে আমরা বীজপুরে গোপন সমীক্ষা চালিয়েছিলাম।

এবার আসি প্রথম প্রশ্নে–
১)বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শুভ্রাংশু রায়কে কেন মানুষ আর চাইছেন না? তিনি তো উন্নয়ন করেছেন,এই অঞ্চলে এবং আশেপাশের অঞ্চলেও তিনি উন্নয়নের কান্ডারী বলে স্বঘোষিত।

–এর উত্তরে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এবং কিছু নেতারা বলেন,”শুভ্রাংশু রায় বিজেপি দলে রয়েছেন। কিন্তু তিনি যদি অন্য কোন রাজনৈতিক দলে থাকতেন তবে তাঁকে ভোট দেওয়ার কথা ভাবলেও ভাবতে পারতাম। কিন্তু তাঁর বিজেপিতে থাকাটা যেমন আমরা মেনে নিতে পারব না, তেমনি তাঁকে ভোট দেওয়ার চিন্তাও আমরা কখনো করব না। তিনি তৃণমূলে থাকলে আমাদের সব ভোট তাঁকেই যেত। তাঁকে ভোট না দেওয়ায় আর একটি অন্যতম কারণ হল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এই অঞ্চলে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে রয়েছে। যা সাধারণ মানুষের চোখ এড়ায়নি। বিগতদিনেও আমরা অর্জুন-শুভ্রাংশুর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখেছি। সুতরাং শুভ্রাংশুকে যদি ভোট দিয়ে এই অঞ্চলে ক্ষমতায় আনা হয় তবে এখানে অর্জুনের আনাগোনা বাড়বে এবং শান্ত বীজপুর অশান্ত হয়ে উঠবে। যা আমরা এবং আমাদের বীজপুরবাসী কখনোই চাই না। তবে এই অঞ্চলে তৃণমূল প্রার্থী সুবোধ অধিকারী ক্ষমতায় এলে বীজপুরের উন্নয়নও হবে, অর্জুনের আনাগোনাও কমবে এবং অঞ্চলে শান্তিশৃঙ্খলাও বজায় থাকবে।”

এবার আসি দ্বীতিয় প্রশ্নে–
২)কেন মানুষ সুবোধ অধিকারীকে বীজপুরের বিধায়ক হিসেবে দেখতে চাইছেন? তিনি তো রাজনীতিতে এসেছেন খুব বেশিদিন হয়নি। অন্যদিকে তিনি রাজনৈতিক পরিবার থেকেও আসেননি।

–এই প্রশ্নের জবাবে বীজপুরের জনতা ব্যবসায়ী ও কিছু নেতার কথা হল,”বীজপুরের উন্নয়নের কান্ডারী বলে স্বঘোষিত শুভ্রাংশু রায় উন্নয়ন করেছেন রাজ্য সরকারের টাকায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত তাঁর মাথার উপর যতদিন ছিল ততদিনই উন্নয়ন করতে পেরেছেন। এই যে করোনাকাল তথা লকডাউন,আম্ফান পরবর্তী পরিস্থিতি,সেই সময় কিন্তু আমাদের বিধায়ককে মানুষের পাশে দাঁড়াতে উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যায়নি। কেন? ওই অসময়ে কেন তিনি মানুষের উন্নয়ন করেননি? কিন্তু লকডাউন হোক বা আম্ফান, দুর্গোৎসব হোক বা ছট্ পুজো,প্রত্যেক ছোট-বড় পরিস্থিতিতে সুবোধ অধিকারী ২৪ ঘন্টা মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। তখন তো তিনি দলের কোন উল্লেখযোগ্য পদেও ছিলেন না। তবে তিনি মানুষের জন্য এত কেন করলেন! তখন তো তিনি ভাবতেও পারেননি যে তিনি প্রার্থী হবেন। কারণ তিনি দিকপাশ না ভেবে শুধু মানুষের জন্য করে গেছেন। আর তার ফল দল তাঁকে দিয়েছে এবং ব্যালটেও সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানাবেন। আর ঠিক এই কারণেই সুবোধ অধিকারীকে আমরাও চাইছি।”

তৃতীয় এবং শেষ প্রশ্ন–
৩)বীজপুরের নেতারা সুবোধ অধিকারীর সঙ্গে আছেন না নেই? তাঁর সাথে থাকা বা না থাকার পেছনে কারণ কি?

–এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে, বেশিরভাগ তৃণমূল নেতা এবং কর্মীরা সুবোধ অধিকারীর সাথে রয়েছে। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন আছেন যারা সুবোধ অধিকারীর সঙ্গে নেই। যদিও আমরা সরাসরি তাদের নাম প্রকাশ করতে চাইছি না। এই গোপন সমীক্ষা করে আমরা দেখেছি যে,ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরপরই বীজপুরে কে হবেন তৃণমূল প্রার্থী এই নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল। কেউ বলেছিলেন বীজপুরে প্রার্থী হবেন রাজ চক্রবর্তী,কেউ তুলেছেন তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য্যের নাম। এই দুই ব্যক্তির কথা খোদ বলেছিলেন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ও। এই নামগুলো নিয়ে কিছু নেতারা খুব খুশি হয়েছিলেন। এই দেখে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলি এ বিষয়ে। তখন তারা বলেন,’রাজ চক্রবর্তী বা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য্য বীজপুরে প্রার্থী হলে আমরা খুশি হব। দলের নতুন মুখ এবং উচ্চশিক্ষিত ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এদের।’ কিন্তু যখন তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা করা হল এবং বীজপুরে সুবোধ অধিকারীর নাম ঘোষিত হল তখন বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা আনন্দে উল্লসিত হয়ে সবুজ আবির খেলতে শুরু করেন। কিন্তু অন্যদিকে কিছু কিছু নেতাকে খুশি হওয়া তো দূরের তাঁকে শুভেচ্ছা পর্যন্ত জানাতে দেখা যায়নি। এমনকি তাঁর হয়ে প্রচার পর্যন্ত করেননি।

এইরকম বেশকিছু নেতা রয়েছেন। এটা যেহেতু একটা গোপন সমীক্ষা ছিল,তাই আমরা কারোর নামই এখানে প্রকাশ করছি না।

তবে সাধারণ যারা মানুষ ও কর্মী রয়েছেন তৃণমূল দলে,তারা সুবোধ অধিকারীকে নিয়ে অত্যন্ত খুশি।তাঁকে ঘিরে তাদের মধ্যে একটা আবেগ,ভালবাসা, শ্রদ্ধা কাজ করছে সেটা আমাদেরও চোখ এড়ায়নি।