অবতক খবর,১২ অক্টোবর: দুর্গেশনন্দিনীর অকালবোধন হয়েছিল শরৎকালে। সেই পুজোর অন্যতম হোতা ছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। অকালে বোধন করেছিলেন মাকে– আর্য জাতীয় প্রতীক হয়ে অনার্য জাতির প্রতিভূ,রক্ষঃবীর রাবণকে নিধনের জন্যে। আমাদের আসল ফেলে নকলের দিকেই ঝোঁক।আমরা কাঞ্চন ফেলে কাঁচের দিকে ঝুঁকে পড়ি।
বসন্তকালের যে বাসন্তী পুজো,সেই বাসন্তী পুজো করেছিলেন রাজা সুরথ।রাবণও শ্রীরামের আগেই বসন্তকালে জাগ্রত দুর্গার পূজো করতেন। মা জেগে থাকতেন সেই সময়, তাই বোধনের প্রয়োজন ছিল না।
সেই পুজোর গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক কম। আমরা ঝুঁকে পড়েছি শারদ উৎসবে অকাল বোধনের দিকে। শ্রী রামচন্দ্রের প্রতি আমাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ সেই দীর্ঘ কাল থেকে। রাবণ যে যথার্থ বীর তা মাইকেল মধুসূদন দত্ত মেঘনাদবধ কাব্যে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন। মহর্ষি বাল্মীকির রামায়ণকে একহাত নিয়েছেন তিনি।
যাই হোক,বীজপুরের অন্তর্গত কাঁচরাপাড়া ১৬ নং ওয়ার্ড যেটি স্পলডিং রোড নামে পরিচিত ছিল,যা আজ কুঞ্জবসু রোড নামে পরিবর্তিত হয়েছে, সেই পল্লীতে যুব সংঘের পরিচালনায় ১৯৫৭ সাল থেকে অকাল বোধনের পুজো হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন শান্তি সরকার,জ্ঞান দাস, ননী গোপাল রায় প্রমুখ। পরবর্তীতে এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন কাঁচরাপাড়ার প্রাক্তন উপ পৌরপ্রধান মাখন সিনহা।
সারা কাঁচরাপাড়া ঘুরলে এই একটিই প্রতিমা দেখা যাবে,যেখানে রামচন্দ্র স্বয়ং অকাল বোধনের পুজো করছেন। ১০৮টি নীল পদ্ম, একটি পদ্ম কম পড়ে গেল। আরাধনায় আঘাত। ধনুকে শর যোজনা করলেন শ্রী রামচন্দ্র। নীলকমলের চেয়েও বেশি নীল অর্ঘ্য দিতে হবে তো দেবীকে। উপড়ে দিতে উদ্যত হলেন নিজের শুদ্ধ নীল চোখ। দেবী স্বয়ং এগিয়ে এলেন, বরাভয় দিলেন।
এই গল্প ভালোবাসার গল্প। এই গল্প শ্রদ্ধা আর একাগ্রতার গল্প। এই গল্প মহাকাব্য হয়ে গেল। এই গল্প বাংলার কবি কৃত্তিবাসের গল্প। মা ছেলের গল্প। এই অকাল বোধনের আরাধনা প্রতিবছর হয়ে চলেছে কুঞ্জ বসু রোডে।