বৈপ্লবিক মধুসূদন
তমাল সাহা

তোমার মতো ক্ষোভ ঘৃণা ক্রোধ-এর উচ্চারণ
অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনন্য প্রতিবাদ
দেখিনি আগে বাংলা কাব্যে।
শব্দচয়নে কী অভিনবত্ব
এতো আধুনিকতা
এতো তির্যকতা শ্লেষ
লুকিয়ে রেখেছিলে তব শব্দ ভাণ্ডারে!

এমনভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলে
মহর্ষি বাল্মীকিকে,
বীররস সিক্ত শৌর্যবীর্যের বাণ নিক্ষেপ করলে তার দিকে
জানো না আগে রত্নাকর দস্যু ছিল সে!

এত সাহস, হিম্মৎ তোমার
অমিত্রাক্ষর ছন্দে চতুর্দশ পদের নৈপুণ্যে মেঘমন্দ্র স্বরে
তৎসম-অর্ধতৎসম মিশ্ররীতিতে—
কিভাবে রামচন্দ্রকে ভিখারি রাঘব, পুষ্পকীট
লক্ষণকে তস্কর,চণ্ডাল,দুর্মতি
এমনকি রক্তসম্পর্কজাত খুল্লতাত বিভীষণকে বলো ধুমকেতু, বর্বর?
মীরজাফরীয় বিশ্বাসঘাতকতা খুঁজে পাও খুল্লতাতের আচরণে।
মেঘনাদবধ কাব্যের উপমাসমূহ কে বিস্মৃত হতে পারে?
রাবণের রণসাজ,যুদ্ধ উন্মাদনা
চন্ডীকে রণচন্ডী রূপে তুলে আনো চরম বাস্তবতায়
মহাভারতের পৌরাণিকতার চিত্রকল্প, জাগতিক হয়ে ওঠে তোমার কাব্যে।
রাবণের যুদ্ধযাত্রায় তুমি আমাদের শেখাও সশস্ত্র যুদ্ধের সমস্ত প্রকরণ- প্রস্তুতি। মহাকবি তুমি,
জাগিয়েছো বীরাঙ্গনা নারী চেতনা, জাতীয়তাবোধ–
তোমার প্রতি আমাদের প্রণতি।

রেখো মা দাসেরে মনে
দাঁড়াও পথিকবর!
কি ভুল করিনু আমি— তোমার আত্মবিলাপ, তোমার বিনীত এইসব প্রার্থনা
অন্যদিকে ঋজু দার্ঢ্য শব্দ ব্যবহারে স্বকীয়তা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
কাব্যরীতির গতানুগতিকতা থেকে দিয়েছে আমাদের মুক্তি।
কবিতায় আধুনিকতা কতদূর যায়
বাংলা-কাব্যজগতে তুমি এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।

নামে মধুসূদন হলেও মাইকেল ছিলে তুমি!
তোমার অন্তর্জলি যাত্রায় বাঙালি আসেনি।
গোধূলি রোদ ছড়িয়ে সূর্য ছিল তখন অস্তাচলগামী!