ভুলে গেছো কি এইসব মৃত মানুষের কথা? দেখো যদি মনে পড়ে আজ এই শীতের রাতে!
আজ সেই দিন যেদিন উত্তর-পূর্ব গোলার্ধের এই উপমহাদেশের ভূপালে তৈরি হয়েছিল নয়া হিরোশিমা।
শুনুন সেই কাহিনীটি।
মধ্য প্রদেশ,ভূপাল। ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের একটি রাসায়নিক কারখানা। সেখানে শীতের মধ্যরাত্রে ৬১০ নম্বর সি প্লান্টের একটি ট্যাংক থেকে ৪০ টন বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট ‘মিক’ গ্যাস লিক হয়ে দ্রুত বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর গুণে যাও শুধু মৃতের সংখ্যা! আর গণতান্ত্রিক দেশে তুমি দেখো রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা।
ভূপাল
তমাল সাহা
সেটা ছিল ১৯৮৪ সাল শীতের মধ্যরাত।
হাজার হাজার মানুষ ঘুমের ঘোরে পেয়েছিল মৃত্যুর বরাত।
কত শিশু মরে ছিল যারা ছিল তখনও মায়ের উঁচানো পেটের ভিতর গর্ভজাত?
হাজার হাজার মানুষের মৃতদেহ পড়েছিল পথে ঘাটে
মিক গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তারা ছিল পলায়নরত।
আপনি বাঁচলে বাপের নাম প্রবাদটি রটে গেল হাওয়ায় হাওয়ায়
হাজার হাজার মানুষ
কে বাঁচবে আগে শেষ পর্যন্ত পদপিষ্ট হয়ে অগণন মারা যায়।
পঁচিশ হাজার মানুষ খুন করলে দু’বছর হাজতবাসের সাজা হয়
কত হাজার মানুষ করেলে খুন
কোনো শাস্তিই পাবে নাকো খুনি
এর উত্তর শাসক না জানুক আমরা তো জানি।
পাঁচ লক্ষ মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছো বিষ
আমরা জানি
হত্যাকারীকে বাঁচাতে কারা তলে তলে দেয় শিস
আমরা জানি
এক লক্ষ সত্তর হাজার বিকলাঙ্গের যারা নায়ক
তাদের সঙ্গে মিলিয়ে গলা গান গাইছে কোন স্বদেশী গায়ক গায়ক।
হাজার হাজার বর্গমাইল জুড়ে
পাত কুয়োর জলে মিশে গেছে বিষাক্ত পারদ, লক্ষ লক্ষ মাতৃস্তনে বয়ে যায় সিসের গরল ধারা।
আমরা জানি
খুনির সাথে মিলিয়ে হাতে হাত পাশায় চাল দেয় কারা।
খুনির বিচার!
কেটে যায় বছরের পর বছর
অমৃত স্বাধীনতার বছরও কেটে যায়…
আমরা তো বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রী!
শাসক হাঁটে ডালে ডালে মানুষ হাঁটে পাতায় পাতায়
সুর ও বেসুর দুই-ই কে বাজাতে জানে?
সকলেই জানে,
মানুষই এই দুনিয়ার সেরা বাদ্যযন্ত্রী
লিখে গেছে সে একটির পর একটি অধ্যায়।