অবতক খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর : শীত কাল মানেই খেজুর গুড়। আর মকর সংক্রান্তি মানে আপামর বাঙালীর খেজুর গুড় চাই চাই। তবে দীর্ঘ তিন বছর ধরে এই মকর সংক্রান্তিতে খেজুর গুড়ের চাহিদা জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছে অনীল বাস্কে। গোয়ালতোড়ের পড়াকালীন গ্রামের বছর ৪০ এর অনীল বাস্কে পেশায় বাড়ই এর কাজ কারেন। আর বছর তিনেক ধরে শীত কালে খেজুর গাছ ভাগে নিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন৷
এই বছর অনীল বাবু গাছ প্রতি সাড়ে তিন কেজি গুড়ের চুক্তিতে ১৩০ টি গাছ ভাড়া নিয়ে গুড় তৈরি করছেন। অনিল ছাড়াও গোয়ালতোড়ের বিভিন্ন এলাকায় আরো কুড়ি পঁচিশ জনের মতো মহলদার গুড় বানাচ্ছেন। কিন্তু গতবছর থেকেই ব্লক ছাড়িয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তার গুড়ের কদর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এবার মকরের আগে গুড় দিতেই হিমসিম খাচ্ছেন তিনি।
একজন গুড় বিক্রেতা উত্তম মাহাত জানান আমি দীর্ঘ প্রায় দশ বছর ধরে গুড় ব্যাবসা করছি। মেদিনীপুর ঘাটাল সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গুড় নিয়ে যায়। অনেকের কাছেই গুড় কিনে এই ব্যাবসা করি ৷ অনীলের কাছের গুড়ের কদরই আলাদা। খুচরা খরিদ্দার থেকে দোকানদার প্রত্যেকেরই একটাই বক্তব্য অনীলের গুড় চাই।
আসলে অনীল রসের মধ্যে কোনো রকম ভেজাল না দিয়েই গুড় বানান খুব দরদ দিয়ে। এই বছরও গত তিন দিন ধরেও তার মহলে ভীড় জমেছে খরিদ্দারের। কিন্তু সেই ভাবে জোগান দিতে পারছেন না তিনি। অনিল বাবু জানান প্রতিদিন এক টিন অর্থাৎ ২৫ কেজি থেকে ৩০ কেজি গুড় হয়। কিন্তু এক একজন এসে পাঁচ কেজি ১০ কেজি গুড় চান। ফলে দিতে পারছি না। অনেকে তো সকাল থেকেই মহলে এসে বসে থাকে। অনেকে বাধ্য হয়ে ঘুরে চলে যায়। কেজি প্রতি ৭০ টাকা দরে গুড় বিক্রি করা হয়। কিন্তু জোগান দিতে না পারার দরুন অনেকেই ঘুরে চলে যান।
অনিলবাবু জানান গত বছর প্রায় ২৫০ টির মতো গাছ নিয়েছিলাম ভাড়ায় তিন কেজি গুড়ের চুক্তির ভিত্তিতে। কিন্তু এই বছর গাছের মালিক চার কেজি করে গুড় দাবী করে ফলে বেশী গাছ নিতে পারিনি। তার উপর
দুই ছেলে আর স্ত্রী কে নিয়ে অনিল এই সিজন টির জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে একটু লাভের আশায়। কিন্তু লাভের আশায় জল ঢেলে দিয়ে আবহাওয়া খারাপের জন্য গুড়ের উৎপাদন কম হয়েছে । তার উপর গাছের মালিক কেও এই সময় গুড় দিতে হয়। ফলে একটু তো সমস্যা হয়েই থাকে। তাসত্ত্বেও ব্লক ছড়িয়ে অনিলের গুড় এখন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের রসাস্বাদন করে চলেছে।