অবতক খবর , সংবাদদাতা , মেদিনীপুর :- মেদিনীপুরের সভা থেকে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগাগোড়া বিজেপি কে আক্রমণ করলেন l রেল সেল প্রতিরক্ষা সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সম্পত্তি বিক্রি করার অভিযোগ তুলে কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় l
সোমবার দুপুরে মেদিনীপুর শহরের কলেজিয়েট স্কুল মাঠে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন আমরা ইতিহাস ভুলিনি l ছত্রধর মাহাতো কে মঞ্চে বসিয়ে তিনি বলেন আমরা যখন প্রথম জঙ্গলমহলে আন্দোলন শুরু করি , তখন ছত্রধর মাহাতো তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ছিলেন l একসঙ্গে আমরা মিটিং করেছি , সেই ছত্রধর মাহাতো কে মিথ্যা মামলায় জেলে পোরা হয়েছে এবং দশ বছর পর তিনি মুক্তি পেয়েছেন l
এছাড়াও জঙ্গলমহলের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে l আজকের জনসভা ব্রিগেডের চেহারা নিয়েছে l মুখ্যমন্ত্রী হাতে পাকা সিস ধানের গোছা নিয়ে বলেন পশ্চিমবাংলা আজ সারা ভারতবর্ষের বুকে একটা দৃষ্টান্ত হয়েছে l সারাদেশে কৃষক আন্দোলন করছেন আমরা তাদের পাশে রয়েছি l কৃষকদের আন্দোলন হয়েছিল নন্দীগ্রাম নেতাই এবং সিঙ্গুরে lসেখানে আমরা কৃষকদের পাশে থেকে লড়াই করেছি l
কৃষকদের স্বার্থে আগামীকাল সমস্ত ব্লকে ধরনা দেওয়া হবে l আমরা সমর্থন করেছি l যদিও আমরা শুরু থেকেই বনধকে কখনো সমর্থন করি না l কালকে আমরা সমর্থন জানাবো l কারণ কৃষকদের আলু পটল মুলো সাধারণমানুষ নিতে পারছেন না l প্রচুর দাম বেড়েছে l কেন্দ্র পটল মুলো খাবে আমাদের দেবেনা lকিন্তু আমরা সহজ মূল্যে সরবরাহ করতাম l চাষীদের অধিকার আজ কেন্দ্র কেড়ে নিয়েছে l চক্রান্ত করে সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে l.দাঙ্গা কুৎসা অপপ্রচার করে রাজ্য সরকার ভাঙার খেলায় মেতেছে বিজেপি l তাই এই বিজেপির উৎখাতের সময় এসেছে l মমতা ব্যানার্জি বলেন বিজেপি কৃষি বিল প্রত্যাহার করো নইলে ভারত ছাড়ো এটা সারা ভারতবর্ষের মানুষ বলছে l
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, খড়্গপুরে কারখানা অনেক আছে l সেগুলো আমাদের গর্ব কিন্তু খড়্গপুরের আরেকটি গর্ব রেল কেরেলকে বিক্রি করার চক্রান্ত হচ্ছে আমরা রেল শ্রমিকদের পাশে রয়েছি প্রতিরক্ষা দপ্তরের সেনারা লড়াই করে সেই দপ্তর বেসরকারিকরণ করার চেষ্টা চলছে l মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমরা লক্ষ্য করছি বিজেপি কংগ্রেস সিপিএম এই তিন ভাই এক হয়েছে l অনেক নেতাকর্মীরা বিজেপিকে পছন্দ করছেন না l আমি তাদের সালাম জানাই l নন্দীগ্রাম নেতাই বেনাচাপড়া সিঙ্গুর এর মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে সিপিএম এখন বিজেপিকে সমর্থন করছে অর্থাৎ রক্ষক ভক্ষক তক্ষক কিংবা অংকা কংকা ডঙ্কা সব এক হয়েছে l
এইসব দল নাকি দেশ চালাবে l এরা দেশের জন্য কি করেছে l এরাই আবার বাংলা দখল করতে চাইছে l কিন্তু আমরা বাংলা দখল করতে দেব না l মা-বোনেরা রাঁধেন এবং চুলও বাঁধে l তারা বিজেপিকে ঝাঁটা বটি নিয়ে তাড়া করবে l মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমাদের কাছে খবর আছে বহিরাগত বাংলায় ঢুকে টাকা বিলি করছেl তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে প্রত্যেকটি ব্লক সভাপতি কে l তাদের কাছে কখনও মাথা নত করা যাবে না l মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন তৃণমূল যখন জন্ম নেয় , তখন অনেকেই বলেছিলেন গরু ছাগলে খেয়ে যাবে কিন্তু আমি বলেছিলাম মাটিতে পেরেক পোতা যায় পাথরে পেরেক পোতা যায় না l তৃণমূল পাথরের মত শক্ত দল , তৃণমূল বটবৃক্ষ তৃণমূলকে আঁচড় দেওয়া যায় না এবং কখনো কিনতে পারবে না এটা আমার চ্যালেঞ্জ l সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন অফিসগুলি থেকে নির্দেশ আসছে সেই মতো তারা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে l মুখ্যমন্ত্রী উদাহরণ টেনে বলেন ধরুন আমি গুলি খেয়ে মরে গেলাম। অফিসগুলো লিখতে বলবে যে করোনা হয়েছিল তাই মারা গেছে l তিনি বলেন একসময় কেশপুর চমকাইতলা এলাকায় গিয়েছিলাম তখন বন্দুক নিয়ে এসেছিলো সিপিএম এর বাহিনী l জঙ্গলমহল অশান্ত করে তুলেছিল এলাকার মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাতো রাত কাটাতো l কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর পূর্ব মেদিনীপুর স্বাধীনতার লড়াইয়ের ভুমি l এই ভুমি কখনো অন্যায় মানে না l আমরা সেই এলাকায় শান্তি ফিরিয়েছি বহুকষ্টে l আর বিজেপি যদি আমাদের দুর্বল মনে করে তাহলে এটা তাদের ভুল l
তারা কখনোই তৃণমূলকে জব্দ করতে পারবে না l আমরা ইতিমধ্যে দশ কোটি স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি , এক কোটি সাইকেল দেওয়া হয়েছে l বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে রেশন l কিন্তু দিল্লি বিহার ইত্যাদি রাজ্যে কি চলছে তা সবাই জানে l একটা মিথ্যা সরকার চলছে l করণা ও আম্ফান প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন কেন্দ্র এসবের হিসাব চাইছে l প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন তুই কি টাকা দিয়েছিস যে হিসাব চাইছিস? জনগণকে আগে তুই হিসাব দে l মুখ্যমন্ত্রী বলেন আমরা সব করবো আর ওরা চ্যাংরামো করে হিসাব চাইবে l বিভিন্ন এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে l
মুখ্যমন্ত্রী এনআরসি নিয়ে বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি বলেন হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ করে জাতিতে জাতিতে দাঙ্গা লাগিয়ে বিজেপি রাজনীতি করতে চাইছে এটা হতে পারে না lবিজেপির টাকা এবং গুন্ডা থাকতে পারে কিন্তু তৃণমূল দলের মত একটাও কর্মী নেই তৃণমূলের মত ঝান্ডা নেই সোনার ধান নেই l আগামীকাল ব্লকে ব্লকে ধরনা হবে এরপর আগামী সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে যাব l কর্মসংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে রাজ্যে l
তাজপুর গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরি হচ্ছে ২৫০০০ বেকার যুবক সেখানে কাজ পাবে যারা চাকরির জন্য বিদেশে যাচ্ছে তাদের বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই তারা রাজ্যে কাজ পাবে l যারা পরিযায়ী শ্রমিক এই সরকার তাদের জন্য ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করেছে l এরপর মুখ্যমন্ত্রী বেশকিছু উন্নয়ন কাজকর্মের উল্লেখ করেন তার মধ্যে স্বাস্থ্য সাথী লোকশিল্প পুরোহিত ভাতা ইমাম ভাতা জয় বাংলা জয় জোহার প্রকল্পগুলি উল্লেখযোগ্য l এছাড়াও ৩% ডি এ দেওয়ার কথা তিনি বলেন l