অবতক খবর , বিনয় ভরদ্বাজ ,উত্তর ২৪ পরগনার :: নৈহাটির দেবকে বাজি কারখানায় মারা গেছেন পাঁচজন, আহতও আছেন কয়েকজন । এনআইএ – কে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি তুলেছেন এলাকার সাংসদ অর্জুন সিং। রাজ্য পুলিশ কারখানার মালিক নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতারও করেছে | কিন্তু এখানে আরো শতাধিক বাজির সারি সারি কারখানা মানুষ মারার কল হিসাবে বিস্ফোরণস্থল দেবকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ।
এদিকে স্থানীয় পুলিশ সূত্র বলছে, দেবকে অবৈধ আর কোনো বাজি কারখানার কথা তাদের জানা নেই । একই কথা দাবি করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান সহ এলাকার নেতারা ।
যদিও ঘটনার পরের দিন পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, এখানে যত বাজির কারখানা রয়েছে সেগুলির সবই অবৈধ । অন্য দিকে, পুলিশ গত কদিন ধরে তল্লাশিও চালাচ্ছে দেবকে। তাহলে স্থানীয় পুলিশ কেন বলছে তাদের এসব জানা নেই ? পেছনে কি কোনো মদত আছে ?
থাকলে কাদের মদতে চলছে এসব বাজি কারখানা ? কাদের সহযোগিতায় এই মানুষ মারার কারখানাগুলো একের পর এক বুক ফুলিয়া কাজ করে চলেছে ? বিভিন্ন মহলে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ।
এর হদিসে নেমেছিল অবতক খবর । দেখাগেলো প্রশাসনিক বোঝাপড়া বা উদাসীনতায় রমরম করে চলছে বহু বাজির কারখানাগুলি । অবশ্যই অবৈধ । চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়া দিলো অবতক খবর ।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গিয়ে দেখা গেলো আরো বহু বাজির কারখানা । খুঁজে বের করতে খুব একটা কষ্ট হলো না । পুলিশ যে কেন এদের খুঁজে পায়না কে জানে । সারি সারি কারখানাগুলিতে প্রচুর তৈরি মাল ও বাজি তৈরির মশলা পড়ে রয়েছে গুদামঘরে। লুকোচুরি নয়, প্রকাশ্যেই পড়ে রয়েছে । এরকম খোলা মেলা বারুদের স্তুপ, তবু হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। অবশেষে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল অবতক খবর।
প্রকাশ্য গুদামঘর ও বাজি তৈরির কারখানা রয়েছে দেবকের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ মিটার এর মধ্যেই । আর তা দেখল ও দেখালো অবতক।পুলিশ কমিশনারকে সব তথ্যও দেওয়া হয়েছে । এতে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সমস্ত বেআইনি অস্ত্র কারখানা, বাজি কারখানা, মালমশলা বাজেয়াপ্ত করা হবে। বন্ধ করে দেয়া হবে এলাকা জুড়ে এই বেআইনি কারবার । কিন্তু বাস্তবে আদৌ কি তা সম্ভব হবে , এ প্রশ্ন সাধারণের !
পুলিশ প্রশাসন তার সত্যতা প্রমাণ করার জন্য বেআইনি কারখানার বিরুদ্ধে অভিযানের নেমেছে । যত্রতত্র অভিযান শুরু হয়েছে। আমডাঙা, নৈহাটি ও আশেপাশের এলাকাগুলিতে এই অভিযান চলছে কিন্তু দেবকে যেভাবে অভিযান চালানো দরকার সেভাবে অভিযান চলছে না। অভিযোগ, প্রশাসন সেখানে চোখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। এখন প্রশাসনের মদতেই প্রশাসনের পাহারায় একের পর এক গাড়িতে মাল বোঝাই করে সমস্ত মসলা পটকাবাজি বেরিয়ে যাচ্ছে সারি সারি। রবিবার সন্ধ্যে পাঁচটা থেকে গাড়ি বেরোনো শুরু হয়। একের পর এক পুলিশের সামনে গাড়ি বেরোতে থাকে । কিন্তু পুলিশ কোন অভিযান চালায়নি বা কোন ধরপাকড় করেনি।
অবশেষে বিরক্ত হয়ে এলাকাবাসীরা বাজির মশলা ভর্তি ৩টি গাড়ি ঘিরে ধরেন রাত ৮টা নাগাদ। ব্যাপক ঝামেলা শুরু হয়। অবশেষে তাদের বাঁচাতে ছুটে আসে পুলিশ । কিন্তু মহিলারা বাধা দেন পুলিশ কে । গালিগালাজ চিৎকার চেঁচামেচি চলতে থাকে।অবশেষে বাধ্য হয়ে পুলিশ ওই তিনটি গাড়িকে বাজেয়াপ্ত করে।
দেবক বাসিন্দাদের দাবি “দাদা! সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে”, যাদের পাহারায় বসানো হয়েছে তাদের দেখাশোনাতেই তাদের ছত্রচ্ছায়াতেই একের পর এক বাজি বেরিয়ে যাচ্ছে, পাচার হয়ে যাচ্ছে এলাকা থেকে। পুলিশ নামকাওয়াস্তে আশেপাশের গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু যেখানে চালানোর দরকার সেখানে কোনো অভিযান চালাচ্ছে না।
এলাকার তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান ও দাপুটে নেতা পার্থসারথি পাত্র জানান, পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান মিথ্যে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন । তাদের সহযোগিতায় এলাকায় বাজি কারখানা চলছে ও বৃদ্ধি পাচ্ছে । শুধু তাই নয় পঞ্চায়েতের সদস্যদেরও নিজেদেরই বেআইনি বাজি কারখানা আছে। তারা আবার বাজির বিরুদ্ধে কি করে অভিযান চালাতে পারবেন ? প্রাক্তন প্রধান পানু পাত্র জানান, তিনি প্রধান থাকার সময় থেকেই এই বেআইনি কারখানাগুলো চলছে্। তিনি একবার বেআইনি কারখানা বন্ধ করার জন্য অভিযানেও নেমেছিলেন । কিন্তু পঞ্চায়েত অন্যান্য সদস্য, তৃণমূল নেতা ও পুলিশের সহযোগিতায় তিনি এগোতে পারেননি। তিনি জানান, এলাকার সদস্য আনোয়ার আলীর মতন আরও অনেক সদস্য আছে যাদের নামে বেনামে বেআইনি বাজি কারখানা চলছে।