বর্ণ ধর্ম শাস্ত্র বিরোধী বিদ্রোহী বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার জন্মদিন আজ
যে বিজ্ঞানী নিজের নাম পাল্টে ফেলেছিল
তমাল সাহা
এইভাবে এক অজ গাঁয়ে
কোনো মুদির ছেলে
দারিদ্র্য ও শ্রমকে পুঁজি করে
পর্যবেক্ষণে নিমগ্ন-বিলীন।
ক্রমাগত ব-বর্ণের অনুশীলনে
হয়ে ওঠে বিশ্বজনীন।
সে বুঝে ফেলে
ব-য়ে বিপ্লব, ব-য়ে বিজ্ঞান এখানেই জীবনের সু-সংবাদ অন্তরীণ।
তাই,বিপ্লবী বোধ বুকে রেখে,
বিজ্ঞান চেতনা রেখে মাথায়
মানুষটি একের পর এক
ঘনিষ্ঠ হয় কাজে
উন্মুক্ত করে নতুন অধ্যায়।
মানুষটি
বাঘাযতীন পুলিন দাসের কাছে আসে,
অনুভব করে তাদের আগ্নেয় প্রতাপ
সতীর্থ সত্যেন বসু, জ্ঞান ঘোষের সান্নিধ্যে বাড়িয়ে নেয় প্রজ্ঞার উত্তাপ।
বুড়িবালামের তীরে
অস্ত্রবাহী ম্যাভেরিক জাহাজের গোপন সংবাদ,
সশস্ত্র সংগ্রামের কথা,কে জানতো আগাম
এখন আমরা জেনে গেছি তার নাম!
বিপ্লব আর বিজ্ঞানকে মেলবন্ধন করে মানুষটি ছুটে যায়,
মানব তপস্যায় নিবেদিত হলে
সে জানে,
পৃথিবীকেই মঙ্গল গ্ৰহ নামে ডাকা যায়।
জ্যোতিষ বিদ্যা ভুয়ো,
ছুড়ে ফেল তাকে আঁস্তাকুড়ে।
জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে
সৌরজগতে চলে যায় মানুষটি,
দেখায় কিভাবে কালচক্র ঘোরে।
সূর্যের প্রখর তেজকে তুড়ি মেরে
বার করে আনে
অন্তরে তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কত উপাদান।
নক্ষত্রের আগুন নিয়ে
কবিরা কবিতা লেখে।
সে বলে, দেখো! নক্ষত্রের ভিতর
আলো আর উত্তাপের পরিমাণ।
সে জানে
পৃথিবী ও ভালোবাসার কথা,
সেখানে মানুষই একমাত্র জন।
মানুষ যদি না বাঁচে,
তবে পৃথিবীর কিসের প্রয়োজন?
লেনিনের মুখ, সমাজতন্ত্রের অভিমুখ দেখেছিল কে?
সেই অনুপ্রেরণায় কে করেছিল
দেশের শিল্পায়ন-বাঁধ-জলধারের পরিকল্পনা?
সে তো আমরা জেনে গেছি এখন—
তার নাম বলবো না!
সে বলেছিল,
শস্যক্ষেত্রের জন্য চাই নদীর জল।
পদার্থের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায়
নিয়মিত চলে সংঘর্ষ—
নির্মাণ তার ফল।
গল্প কি শেষ হয়?
ঝড় জলের রাতে জন্ম হয় তার
এই বিপর্যয়ের দেবতা তো মেঘনাথ।
মেঘনাথ! এ কেমন তার নাম
এ তো শুনি সুররাজ ইন্দ্র দেবতা!
তার নাকি ঐশ্বরিক ক্ষমতা!
সে নিজেই পাল্টে ফেলে নিজের নাম
আমি হতে চাই সুর নয়, লড়াকু ইন্দ্রজিৎ,
কন্ঠে তার উচ্চনাদ—
আমি মেঘনাদ! আমি মেঘনাদ!
যারা বোঝার
তারা আগেই বুঝে গিয়েছিল,
মেঘের আড়ালে লুকানো ছিল
কি বিপুল গর্জন!
মেঘনাদ! মেঘনাদ!
বিজ্ঞান ও বাস্তবতার অন্য নাম—
দুনিয়া জয়ের বিপুল আয়োজন।