শীতের কবিতা। আগুন জ্বালানোর আয়োজন।
লকড়ি
তমাল সাহা
লকড়ি চাহিয়ে! লকড়ি!
শোর তুলে যে লোকটি টুকরো কাঠের বান্ডিল মাথায় করে ফেরি করে বেড়াত
তাকে আর দেখি না।
সেসব ফেরিওয়ালা শহর থেকে হাপিস হয়ে গিয়েছে।
বাবা বলতো, তোর মা এই ফেরিঅলার কাছ থেকে কাঠের বাণ্ডিল কিনতো। খোলা উঠোনে একটা উনুন পেতেছিল তোর মা! তিন ঝিকের উঠোন। এক একটা দিককে কি বলে জানিস?
তিনটে ঝিক হলো ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর- তিন তিনটে দেবতার সমাবেশ!
বিশেষ করে শীতকালে ওই উনুনে লকড়ি জ্বালিয়ে মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্না করতো,তোর মা।
তখন সেই ভাতের গন্ধ শীতের বাতাসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো।
এখন আর এসব হয় না। এখন সেই লকড়িও
নেই, মা-ও নেই,
উঠোনে মায়ের হাতেপাতা উনুনও নেই।
আর মাটির হাঁড়িতে এখন কেউ আর ভাত রাঁধে না।
বাবা বলতো, তোর মায়ের হাতের ওই আগুন ছিল দেখবার মতো।
আস্তে আস্তে সেই আগুনের দম বাড়াতো তোর মা।
সে ভাতের স্বাদই আলাদা।
তোর মা বলতো,কমবেশি আঁচের উপর ভাতের
সোয়াদ নির্ভর করে।
ভাত না হওয়া পর্যন্ত আগুন নেভার কোনো জো ছিল না। বিশেষ সাইজের একটা পাটকাঠিতে ফুঁ দিয়ে দিয়ে আগুন উস্কে রাখতো তোর মা।
লকড়ি থাকলেই হবে না। লকড়ি নিজে জ্বলে না, তাকে জ্বালাতে হয়।
তাও আবার সবাই জ্বালাতে জানে না। পৃথিবীতে আগুনের মতো মূল্যবান কিছু নেই।
তুই তো জানিস আদিম যুগের প্রথম আবিষ্কার আগুন। জীবনে জন্মের পরেই অগ্নিশুদ্ধ হতে হয়। যজ্ঞ
করে পুরোহিত। আর জীবন শেষে আগুনের প্রয়োজন তা তো তুই শ্মশানঘাটেই দেখেছিস।
জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে যে জায়গাটা সেই সময়ে আগুন জ্বালানোর সাগ্নিক খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর।
হায়! কবেই যে একথা মায়ের মুখে শুনেছি…