নিজস্ব প্রতিবেদক :: অবতক খবর :: মোথাবাড়ি :: লকডাউনে বিপর্যস্ত জনজীবন। তারমধ্যে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে এখনও আটকে অনেকে। এমনও আছেন, ভিনরাজ্যে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কোনও শ্রমিকরা। এরকম এক শ্রমিকের পাশে ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন ওই শ্রমিকের গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য। নিজে গাড়িতে গিয়ে নিউ দিল্লি থেকে ওই শ্রমিককে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছেন। এই রকম এক পঞ্চায়েত সদস্য ফাজলে কারিমুল আখতারকে কাছে পেয়ে এলাকার অনেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছেন।
লকডাউনের মধ্যে জম্মুতে আটকে পড়েছিলেন মালদা জেলার মোথাবাড়ি থানার উত্তরলক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শুকর্দিটোলা গ্রামের বাসিন্দা মোসারাফ হোসেন(৫৫)। মোসারাফ দীর্ঘদিন ধরে ভিন রাজ্যে বিভিন্ন সংস্থায় শ্রমিকের কাজ করেন। লকডাউনে আগে জম্মুতে নির্মাণ সংস্থাতে কাজে যান এবং লকডাউনের শুরুতেই প্যারালাইসিস রোগাক্রান্ত হন মোসারাফ। কিন্তু লকডাউন ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে আসতে পারছিলেন না মোসারাফ। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে একজনকে সাথে নিয়ে পরিবারের ইচ্ছায় লকডাউনে আপ-ডাউন নিয়ে ৩২০০ কিলোমিটার সড়ক পথে পারি দেন সংস্লিষ্ট গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য ফাজলে কারিমুল আখতার ওরফে (লাল্টু বিশ্বাস) এবং গ্রামের সঙ্গী দক্ষ ড্রাইভার মাসিরুদ্দিন সেখ (মনি)।
লাল্টুও ড্রাইভিং করতে পারেন। দুজনে নিউ দিল্লি যাওয়ার জন্য বোলেরো করে সড়ক পথে দ্রুত রওনা দেন। করোনা ও লকডাউনের আবহে এ যেন এক বিরল ও ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা বললে হয়ত ভৃল বলা হবে না। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন রাজ্যের মধ্যে যাওয়ার ছাড়পত্র দিলেও ভিন রাজ্যে যাওয়ার ছাড়পত্র দেয়নি। তবে রাজ্যের দেওয়া টোলফ্রি নম্বরে যোগাযোগ ও অন লাইনে আবেদন জানানো হয় ভিনরাজ্যে যাওয়ার। অবশেষে অনুমোদন পাওয়া যায়। অসুস্থ পরিবারের সদস্যরা ক্রমশ ছেলে বাড়ি ফেরা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কে যাবে এই লকডাউন ও কষ্টের মধ্যে নিয়ে আনতে। যদিও সবকিছু উপেক্ষা করে এই লকডাউনে ঝুঁকির যাত্রায় নিউ দিল্লি স্টেশন থেকে আনতে ড্রাইভারের সঙ্গে সক্রিয় সাড়া দেন পঞ্চায়েত সদস্য ফজলে কারিমূল আখতার(লাল্টু বিশ্বাস)।রাস্তাতে কখনো চালভাজা, ছোলা চিবাতে চিবাতে ও গান শুনতে শুনতে পথ চলেন তারা। লকডাউনে দীর্ঘ পথে চলতে একাধিক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁদের। কখনো খাবার সমস্যা, কখনো রাস্তাতে পুলিশের চেকিংয়ে ঘন ঘন জেরা ও হয়রানিতে নাজেহাল হতে হয়েছে। জেলা ও রাজ্যের সীমানা পার হতে গিয়ে কমপক্ষে ২৫ বার পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। কারণ করোনা ও লকডাউনে রাস্তা কড়াকড়ি। রাস্তা ছিল শুনশান, কিছু জরুরি যানবাহন ও শ্রমিক ছাড়া অন্য কিছু রাস্তাতে দেখা যায় না। বি
শেষ ট্রেনে জম্মু থেকে মোসারাফ আসেন নিউ দিল্লি স্টেশন। সেখান থেকে সুষ্ঠুভাবে শনিবার প্যারালাইসিস রোগীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছন গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য ও ড্রাইভার। যদিও জম্মুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ও সবধরনের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে মোসারাফের। স্বাস্থ্য বিধি মেনে এখন বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টিনে ।
গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য ফজলে কারিমূল আখতার বলেন, ‘আমি গ্রামের একজন পঞ্চায়েত প্রতিনিধি। কারও যদি অসুবিধা ও বিপদের কথা জানতে পারি আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকতে সর্বদা চেষ্টা করি তাঁকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের।’