আনন্দ মুখোপাধ্যায় :: অবতক খবর :: ২৬শে,নভেম্বর :: নয়াদিল্লি :: প্রাজ্ঞ মারাঠা রাজনৈতিক ও অকটোজেনেরিয়ান নেতা শরদ পাওয়ার এর দাবার চালে থেমে গেল মোদী অমিত এর অশ্বমেধের ঘোড়া ।
মহারাষ্ট্রের মহা নাট্যেৰ অবসান ঘটিয়ে ইস্তফা দিলেন ফড়নবীশ । এর আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেওয়ার চিঠি জমা দেন এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার। তাঁর পদত্যাগের পর গরিষ্ঠতা অর্জনের আর কোনো সম্ভাবনা নেই দেখে দেবেন্দ্র ফাডনবিশকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন দলের সভাপতি অমিত শাহ।
আজ সকালেই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন, কাল বুধবারের মধ্যেই বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে নতুন সরকারকে গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাতে প্রথা অনুযায়ী সবচেয়ে প্রবীণ বিধায়ককে ‘প্রোটেম স্পিকার’ নিযুক্ত করতে হবে। তিনিই আস্থা ভোট গ্রহণ করাবেন। এবং তা করতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে। গোটা অনুষ্ঠান ভিডিওগ্রাফ করে রাখতে হবে।
এ নির্দেশের কিছু সময় পরেই অজিত পাওয়ার বুঝে যান, তাঁর পক্ষে দু-একজনের বেশি বিধায়ক জোগাড় করা সম্ভব নয়। দুপুরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে তা জানান। দেবেন্দ্র ফাডনবিশ পরিস্থিতি জানান দলনেতা অমিত শাহকে। শাহ বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। এরপরই ফাডনবিশকে বলা হয় পদত্যাগ করতে। বিকেলে তা করার পর তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অজিত পাওয়ারের সমর্থনে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন। এখন বিরোধী পক্ষে বসবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফার সঙ্গে সঙ্গে কাল আস্থা ভোট গ্রহণের আর কোনো বাধ্যবাধকতা রইল না। বিজেপিবিরোধী যে মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাঢ়ি জোট মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেস গড়ে তুলেছে, উদ্ধব ঠাকরেকে সেই জোট তাদের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যপালের কাছে সেই দাবি জানানোর পর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন উদ্ধব। তিনি বিধায়ক বা বিধান পরিষদের সদস্য নন। কোনো দিন তিনি নির্বাচনেও দাঁড়াননি। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য পারিবারিক প্রথা ভেঙে এই প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিধায়ক হয়েছেন। অতএব তাঁকে হয় বিধান পরিষদের সদস্য হতে হবে, নয়তো ছয় মাসের মধ্যে বিধানসভার কোনো উপনির্বাচনে জিততে হবে। অন্য দুই শরিক দল এনসিপি ও কংগ্রেস পাবে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ।
মহারাষ্ট্র হারানো বিজেপির কাছে নিশ্চিতভাবেই একটা বড় ধাক্কা। মহারাষ্ট্র দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য। এই রাজ্যই দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী। শিবসেনাও বিজেপির গত তিরিশ বছরের শরিক। মুখ্যমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির প্রশ্নে সেই শরিকের জোট ছেড়ে যাওয়া বিজেপির কাছে অবশ্যই বড় ঝটকা। এনসিপি ভাঙিয়ে সেই ক্ষতি পূরণের চেষ্টা অসফল হওয়ায় বিজেপির নীতিনির্ধারকদেরও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
একই রকমভাবে বিজেপি বিরোধী জোটে শিবসেনাকে শামিল করতে পারাও শরদ পাওয়ারের এক বিরাট সাফল্য। চলতি বছরের শেষে ঝাড়খন্ড ও আগামী বছরের গোড়ায় দিল্লি বিধানসভার ভোট। সেই ভোটে মহারাষ্ট্রের এই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ প্রভাব ফেলতে পারে।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী শিবসেনাকে সমর্থন দলের পক্ষে মঙ্গলজনক কি না, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে কংগ্রেসে । কংগ্রেসের মতে, বিজেপি এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ। বিজেপিই দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট করছে। বিজেপিকে ছেড়ে বেরিয়ে আসা শিবসেনাকে সমর্থন তাই নীতির সঙ্গে আপস করা নয়; বরং বিজেপি বিরোধিতা এতে জোরালো হবে।
বিজেপিবিরোধী জোটের যে রাশ এত দিন কংগ্রেসের কাছে ছিল, মহারাষ্ট্রের মহানাটক তা তুলে দিল এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের হাতে। ৭৯ বছরের এই মারাঠা রাজনীতিকের কাছে লজ্জাজনক হার স্বীকার করতে হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দক্ষিণ হস্ত দল সভাপতি অমিত শাহকে। এর পর বোধহয় অমিত – মোদী জোটকে নতুন করেই রাজনৈতিক সমীকরণের কথা ভাবতে হবে আগামী নির্বাচন গুলিতে । আর নতুন করে শক্তি যোগাবে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসকে ।