অবতক খবর,২২ জানুয়ারি: বাংলাদেশে বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বিশেষ বিশেষ পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তাছাড়া বাড়িতে অতিথি এলে কম করে হলেও দু’তিন পদের পিঠা খাওয়া গ্রামবাংলার মানুষের চিরায়ত ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত। কালের বিবর্তণে এ ঐতিহ্য এখন ম্লান হয়ে আসছে। তবে শীত এলে বাংলার ঘরে ঘরে এখনো পিঠা তৈরির উৎসব শুরু হয়। অগ্রহায়ণের নতুন চালের পিঠার স্বাদ সত্যিই বর্ণনাতীত। শীতের পিঠার স্বাদের কথা বলতে গিয়ে অনেকেই ছন্দে ছন্দে বলেন, ‘শীতের পিঠা ভারি মিঠা’। চুলার পিঠে বসে পিঠা খাওয়ার শৈশব স্মৃতি সবারই কম বেশি রয়েছে।

‘পৌষ-পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে, আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’- কবি সুফিয়া কামাল তার কবিতায় পিঠা খাওয়ার দৃশ্য এভাবেই তুলে ধরেছেন। এক সময় শুধু গ্রামের মানুষই পিঠা খেত। শহুরে ব্যস্ততার কারণে পিঠার স্বাদ নিতে নগরজীবীদের কেউ গ্রামে গিয়ে পিঠা খেয়ে আসতো। অথবা গ্রাম থেকে শহরে বসবাসকারী প্রিয়জনদের জন্য পিঠা তৈরি করে পাঠাতো কেউ কেউ। কিন্তু এখন সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃশ্যপটও আমূল বদলে গেছে।

এখন গ্রামের মত শহরেও শীতের সব ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। এমনকি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পিঠা নিয়ে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের আয়োজনে বেশ কয়েকবার পিঠা উৎসব হয়েছে। প্রতিবছর শীত এলে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলের সড়কেও পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। আজ সকালে সিটির কদমতলী থানার মোহাম্মদবাগে বাবা-মার সঙ্গে দলে দলে শিশু-কিশোরদের পিঠা উৎসবে আসতে দেখা যায় ।

তাছাড়া রাজধানীর বেইলি রোডের খাবারের দোকানগুলোতে পুরো শীতের মৌসুমজুড়ে চলে পিঠা উৎসব। সেইসঙ্গে খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারক অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি করে ভোক্তাদের জন্য অপেক্ষা করেন।শীতের মজাদার পিঠার মধ্যে রয়েছে ভাপা, পাটিসাপটা, পাকন, পুলি, মিঠা, ক্ষীরপুলি, নারকেলপুলি, আনারকলি, দুধসাগর এবং চিতই প্রভৃতি। এছাড়াও শহরের অলিতে-গলিতে কিংবা ব্যস্ততম বিভিন্ন সড়কের পাশে মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন।

তবে এসব দোকানে চিতই ও ভাপা পিঠা ছাড়া অন্য পিঠা তেমন একটা পাওয়া যায় না। স্বল্প আয়ের মানুষরাই মূলত এই পিঠা খেয়ে থাকেন।শীতের সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাসে ভাপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন ব্যাকুল হয়ে যায়। সরষে বা ধনে পাতার বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে শরীরের শীত অনেকটাই কমে যায়। তাই বলা যায়, পিঠা ছাড়া শীত সত্যিই জমে না।