শেষ চুম্বন কত প্রগাঢ় হতে পারে
তমাল সাহা

১৯ জুনের এই সূর্যাস্তবেলায় আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি নিউইয়র্কের ওয়েলউড সিমেট্রিতে।

১৯৫৩ সাল। তখন তিন বছর বয়স আমার।
আমি এই গোরস্থানে এসেছিলাম। প্রায় সাড়ে দশ হাজার মানুষ হাজির ছিল এই সমাধিক্ষেত্রে। ওই ছোট্ট বয়সেই আমি মানুষের সংখ্যা গণনার বিদ্যা শতকিয়া শিখে গিয়েছিলাম।

এদিন ছিল তাদের ১৪-তম ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি এবং যুগপৎ হাত ধরাধরি করে পৃথিবীর শেষপ্রান্তের দিকে হেঁটে যাবার দিন।

ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে শক দিতেই জুলিয়াসের ছোট্ট প্রাণটুকু বেরিয়ে গেল
কিন্তু মেয়েদের তো কই মাছের প্রাণ!
প্রথম শক, দ্বিতীয় শক,তৃতীয় শক তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল ইথেল।
পাঁচে পঞ্চবাণ। পঞ্চম শকে ইথেলের মাথা থেকে ধোঁয়া বেরুতে শুরু করলো…
তারপর? পৃথিবীর ভূগোলে ইতিহাস হয়ে গেল!

দোষ তারা করেছিলই
দোষ না করলে কি আর রাষ্ট্র কাউকে হত্যা করে?
আন্তর্জাতিক মানুষের হৃদয় চুরি করে নিয়েছিল তারা
অপরাধ তাদের ছিলই
তারা ছিল কমিউনিস্ট
স্পষ্ট করে বললে দেশদ্রোহী কমিউনিস্ট!

আমি সব দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম
সমাধিক্ষেত্রের সেই বর্ণময় গাছগুলি থেকে পাতা ঝরে পড়ছিল
মর্মর ধ্বনিতে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম পাতারা বলছিল,
কমিউনিস্টদের যখন হত্যার আয়োজন করা হয় তখনই বোঝা যায় রাষ্ট্র হেরে গিয়েছে!

( কমিউনিস্ট হওয়ার অপরাধে জুলিয়াস রোজেনবার্গ ও ইথেল রোজেনবার্গ দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯ জুন,১৯৫৩।
পোপ,আলবার্ট আইনস্টাইন, পাবলো পিকাসোর মতো ব্যক্তিত্বদের আবেদনকে খারিজ করে দিয়েছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আইজেনওয়ার। জা পল সার্ত্রে মন্তব্য করেছিলেন, আইনের অজুহাতে একটি গোটা জাতি গায়ে রক্ত মাখছে।)