আমার যাপিত জীবন মানেই বন্ধুতার সাহচর্য। বন্ধু উদ্ধত কন্ঠে বলল, না। কিছুতেই এমন নামকরণ হতে পারে না। পোড়া মাংসপিণ্ডের কবিতা! এ আবার হয় নাকি? তুই দিনকে দিন নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছিস! বইয়ের ভেতর তোর বিষয় বক্তব্য নিশ্চয়ই থাকবে কিন্তু না, প্রারম্ভিক নামকরণ এমন হতে পারে না।
আমি বলি, ঘটনা ঘটবে, বাস্তবতা আছে। তাহলে এমন নামকরণ কেন হবেনা? ঘটনা আমাকে বিবেকহীন করে দিচ্ছে।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর ওকেই মান্যতা দিলাম। ও নামকরণ করল ‘অন্তর্দাহ’। প্রকাশের দিন সকলেই ওকে বাহবা দিল। আমি খুশি হলুম, বন্ধু জয়ী হয়েছে।
সেই বন্ধুকে সামনে রেখে আজকের এই লিখন।
সেই কুকুরটি
তমাল সাহা
সেই কুকুরটি কসাইয়ের দোকানের সামনে ওত পেতে বসেছিল। রানের মাংস টুকরোটি ছিটকে পড়তেই মুখে করে সে কী দৌড়! হাতের চপারটি দ্রুত ছুড়ে মারল কসাই। ততক্ষণে কুকুরটি সাঁকোর উপরে চলে এসেছে। তারপর অত্যন্ত লোভী হওয়ায় কি ঘটেছিল সে সকলেরই জানা।
সেই কুকুরটির সঙ্গে দেখা হয়েছিল। হয়তো কাবাব বা তন্দুরি মাংসের গন্ধ তার নাকেও পৌঁছেছিল। আর কে না জানে কুকুরের ঘ্রাণশক্তি অতিশয় প্রবল।
গিয়ে দেখি সে জতুগৃহের দরজার কাছে বসে আছে। সে নজর করে দেখছে, বেশ বড় বড় সাইজের কাবাবের মাংসপিণ্ড কাপড়ে জড়িয়ে বের করে নিয়ে যাচ্ছে ডোমেরা পুলিশের তত্ত্বাবধানে।
উদ্ধারকার্য শেষ হলো কিন্তু পোড়া মাংসের গন্ধ তখনও বাতাসে ভাসছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে কুকুরটি যখন দেখল ধারেকাছে কেউ নেই তখন সে সোজা ঢুকে পড়ল জতুগৃহে, যদি মাংসের দু-একটা ছোট টুকরোও পড়ে থাকে! পেয়েও গেল।
শুকতে লাগলো অনেকক্ষণ। সুস্বাদু গন্ধ। কিন্তু কিছুতেই মুখে তুললো না। বুঝল এটা ছিটকে পড়া বিক্রির মাংস নয়। এতে নরহত্যার গন্ধ লেগে আছে।
এতো পেশাজীবী কসাই নয়, পেটের দানাপানির জন্য মাংস বিক্রি করছে এমন নয়! এতো নরহত্যার চক্রান্ত!এতে নরঘাতকদের হিংস্রতা লেগে আছে।
কুকুরটি মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো।