আজ পূর্ণিমা তিথি। প্রভু জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। রথের আগমন ধ্বনি শোনা যায়

স্নানযাত্রা
তমাল সাহা

স্নান শব্দটিতে শুদ্ধতা আছে।

মাহেশের রথের মেলায় রাধারাণী হারিয়ে গিয়েছিল।
হারিয়ে যাওয়ার মধ্য স্বর্গীয় আনন্দ আছে।
সেটা আমি বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারাণী উপন্যাসে মাহেশের রথ ও রাধারাণী অংশটি পড়ে বুঝে ফেলি।

রাধারাণী যদি পথ না হারাতো তাহলে নিশ্চিত অসমবয়সী কিশোরীটির সঙ্গে তার বৃষ্টিতে ভেজা হতো না।
বৃষ্টিতে ভেজার জলজ ঘ্রাণ আর ভালোবাসা সৃজনের যুগপৎ সুবাস আমি এই অংশটি থেকে পেয়েছিলাম।
বুনোফুলের মালা এবং অন্ধকারের গুরুত্ব এই জীবনে কতখানি তা বুঝে গিয়েছিলাম।

এই প্রথম কোনো নারী ও পুরুষের স্নানের দৃশ্য আমি দেখেছিলাম।

বৃষ্টিতে ভিজে তাদের জ্বর হয়েছিল কিনা বঙ্কিমবাবু লিখে যান নি।
তবে আমি জানি দুটি ভেজা হাতের অমল স্পর্শে তাদের বেহুশ জ্বর হয়েছিল।
বুকের ভেতর নিঃশব্দ জ্বরের বিলাপ চলছিল।

স্নানঘরে গান ওঠে।
শরীর বেয়ে জল ঝরে, সে এক অপূর্ব স্নান!
স্নানের গভীরতা কবিতারা জানে।
স্নান আর গান একাকার হয়ে যায়!
কবিরা স্নানঘরের বাইরে থাকে
কিন্তু অনন্য চোখে কবিতাদের ঐশ্বর্য দেখে আর তাদের কন্ঠে ‘ঝরে যায় বারিধারা’ মেঘমল্লারের গান শোনে!

জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় ১০৮ ঘড়া জলে স্নান!
জ্বরে জগন্নাথের দেহের তাপমাত্রা বাড়ে
রাজবৈদ্যের মন্ত্রোচ্চারণ, আয়ুর্বেদিক পাঁচন নিরত থাকে নিরাময়ে তার শুশ্রূষায়।

সব জ্বর কি কমে,
সব তাপমাত্রা কি মাপা যায় থার্মোমিটারের পারায়?
স্নানে গভীরতা থাকলে জ্বর আসবেই
স্নানযাত্রা তার প্রতীক, আমাদের জীবনে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

জলপটি দাও কপালে, ঘন হয়ে জ্বর আসে কবিতাদের।শুধু কবিরাই জানে।
কবিতাদের অবয়বের রূপান্তর দেখলেই কবিরা বোঝে তার মানে!