হিউয়েন সাঙ ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তখন কোন রাজবিরোধী আন্দোলন দেখেন নি। এখন এলে প্রজাবিরোধী শাসকের কাণ্ডকারখানা দেখতে পারতেন।
হিউয়েন সাঙ-এর বিবরণ
তমাল সাহা
হিমালয় পেরিয়ে হিউয়েন সাঙ এসেছিলেন ভারতবর্ষে।
হিউয়েনসাঙ-এর বিবরণী লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়।
আমরাও লিখেছি তার ভ্রমণ বর্ণনা পরীক্ষার খাতায়।
কি দারুন বর্ণনা তাঁর।
ভারতবাসী খুব সুখে ছিল।
চোর তস্করের ছিলনা কোন অধিকার।
তিনি বঙ্গোপসাগরের জলে স্নান করেছিলেন কিনা সে কথা লেখেননি।
তিনি দেখেছিলেন কি অনাগত রবীন্দ্র-নজরুলের পলল মৃত্তিকা বিধৌত জনপদ, তাও বলে যাননি।
তিনি এখন এলে খুঁজে পেতেন ভিন্সেন্ট স্মিথ-এর ঐতিহাসিক বক্তব্য।
লবন হ্রদ শহরের কিনারে
বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য কিভাবে শুয়ে আছে জড়াজড়ি করে।
তাকে স্যালুট জানিয়ে
তিনি হয়তো লিখতেন কিছু কথা।
তিনি দেখতে পেতেন অনশনে জেগে আছে ভগীরথ, চন্দ্রচূড়,ফারুক, আলাউদ্দিন একসাথে একই বিছানায়।
তাদের উপরে নক্ষত্র জেগে থাকে রাতের পাহারায়।
তাঁর বিবরণীতে যুদ্ধের কথা নেই।
তিনি দেখতে পেতেন যুদ্ধের নয়া ইতিহাস-
প্রজার নীরব অথচ মৃত্যুমুখী সংগ্ৰাম।
হাজার হাজার মাস্টারমশাই ছুটে এসেছে ফাঁকা করে দূর-দূরান্তের গ্রাম।
রাজতন্ত্রের কথা তিনি জানতেন।
গণতন্ত্রের এই অপূর্ব মহিমা তিনি দেখে যেতে পারেননি।
হর্ষবর্ধনের প্রজা বাৎসল্যের কথা তিনি জানতেন।
রাজকোষের অর্থ প্রজাস্বার্থে জানতেন তিনি।
কিন্তু গণতান্ত্রিক মন্ত্রীরা
কাঁড়ি কাঁড়ি লক্ষ লক্ষ মুদ্রা পায়,
পায় কর্পোরেটি মোহর,
তিনি জানতেন না,
জনতার দিকে নেই শাসকের নজর।
তিনি পথে কোন বিক্ষোভ দেখেছিলেন কিনা জানিনা।
তবে গণতান্ত্রিক মন্ত্রীরা যে ভিক্ষুক মহান।
তাদের কামাইবাজির দীর্ঘ হাত —
তা তিনি এখন এলে বিবরণীতে লিখে
কাটাতে পারতেন রাতের পর রাত।
তিনি পৃথিবীর বিরলতম এবং আশ্চর্যতম দৃশ্যটি দেখতে পারতেন বিধাননগরে।
বিলাসবহুল নগরীর পথিপার্শ্বে দাঁড়িয়ে আছে বিকাশ ভবন মাথা উঁচু করে।
বিকাশ ভবন শব্দটির অর্থ জেনে নিয়ে
তিনি চৈনিক ভাষায় কি লিখতেন আমার জানা নেই।
আর লিখতেন সেই বিকাশ ভবনের ৫০০ মিটার দূরে
কোনমতে সামিয়ানা খাটিয়ে প্রগাঢ় শৈত্যপ্রবাহের ভেতর ভুখা পেটে শুয়ে আছেন ৪০ জন মাস্টারমশাই গাদাগাদি করে।
তাদের বাঁচার দাবি নিয়ে রিলে অনশনে আন্দোলনে মেতেছে তারা।
৪৮ হাজার শিক্ষক ও অগণিত মানুষ তাদের দিচ্ছেন পাহারা।
আর দেখতে পেতেন নীরব রাজকীয় উল্লাসের ভেতর চোখের জল শীতের প্রহরে শিশির হয়ে নামে, বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।
হিউয়েন সাঙ, দেখো
রাজদণ্ড হাতে পেলে শাসক কতদূর যায়!
নিরস্ত্র সরল মানুষ অসহায়
মাথা নিচু করে কাঁদে
চোখের জলে মাটি ভিজে যায়…