অবতক খবর,কলকাতা,৯ জুন,সুমিত: ১১ বছর আগে বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের মামলায় সিবিআই তদন্ত। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বেঞ্চ এই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। গত ১১ বছর রাজ্য পুলিসের সিআইডি এই মামলার তদন্ত করছিল। কিন্তু সিআইডি তদন্তে আস্থা হারিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নিহত নেতার স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। সেই মামলা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে ফের হাইকোর্টে ফেরে। অবশেষে এদিন সিআইডির হাত থেকে তদন্তভার নিয়ে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি বিশেষ সিবিআই আদালতে এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছে বিচারপতি মান্থার বেঞ্চ।

রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার গঠনের পরেই ২০১১ সালের ৬ জুন গুলি করে খুন করা হয় তপন দত্তকে। রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। এই খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য তথা হাওড়ার তৃণমূল নেতা অরূপ রায়ের। সিআইডি তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর অরূপ রায়-সহ হাওড়া, বালি এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতার নাম চার্জশিটে উল্লেখ করে। কিন্তু সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে অদ্ভুত কারণে সেই নামগুলি বাদ যায়।


২০১৪-র ডিসেম্বরে তথ্যপ্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে যায় অন্য অভিযুক্তরা। এরপরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় নিহত নেতার পরিবার। ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করে। কিন্তু হাইকোর্টের অবস্থানের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্তরা। সেই মামলায় দেশের শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের অবস্থানেই আস্থা রেখে ফের কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ফেরায়।
এরপরেই উচ্চ আদালতে শুরু হয় সওয়াল-জবাব। তপন দত্ত পরিবারের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, তপন দত্ত পরিবারের আবেদন এই মামলা সিবিআই তদন্ত করুক। পাশাপাশি একমাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু সেটা এখনও সম্ভব হয়নি। এরই মাঝে বারেবারে উত্যক্ত করা হয়েছে পরিবারের লোককে। বিশেষ করে নিহত তপন দত্তের স্ত্রী ও মেয়েদের। এই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ষষ্ঠী গায়েন।
প্রথম চার্জশিটে নাম ছিল অরূপ রায়ের। পরের চার্জশিটে অরূপ রায়ের নাম নেই। রাজ্যের এই মন্ত্রী প্রভাবশালী বলে পরিচিত। এমনটাই আদালতকে জানান বিকাশবাবু। এদিকে স্বামীর মৃত্যুর বিচার চাইতে ১০ বছর ধরে আদালতে ঘুরছেন তপনবাবুর স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলা তাড়াতাড়ি শেষ করার নির্দেশ দেয় ২০২২ সালের ১৪ মার্চ।

জানা গিয়েছে, গোবিন্দ হাজরার নাম আছে চার্জশিটে। জলাভূমি বাঁচাও প্রকল্পে কাজ করছিলেন তপন দত্ত। সেটাতেই যারা জলাভূমি ভরাটের পক্ষে তাদের থেকে হুমকি দেওয়া হত তপন দত্তকে। পরে খুন করে রেললাইনে ফেলে রাখা হয়েছিল। আবেদনকারীদের না জানিয়ে তপন দত্তর মৃতদেহ সৎকারের চেষ্টার অভিযোগও তোলা হয়েছে।


তাই এখন অভিযুক্ত ভয় পাচ্ছে সিবিআই তদন্ত হলে তারা অভিযুক্ত, সেটা আবার প্রকাশ্যে আসবে। কিন্তু তাদের স্বরূপ উন্মোচিত না হলে বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা উঠে যাবে মানুষের। তাই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিকাশ ভট্টাচার্য। যদিও শুনানিতে অন্যপক্ষের আইনজীবী জানান এই ঘটনার তদন্ত করছে রাজ্য পুলিস। সেই তদন্তে ভরসা রাখুক আদালত। এই সওয়াল জবাব শেষেই সিআইডির থেকে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিবিআইকে।