অবতক খবর, সংবাদদাতা, মালদা :: এ এক অদ্ভুত অসুখ। শরীরের থেকে বড় মাথা। শরীরের থেকে মাথার ওজন বেশি। যত দিন যাচ্ছে মাথা আরোও বড় হয়ে যাচ্ছে। তার বয়সের অন্য শিশুরা যখন বসতে শিখছে , হাঁটতে শিখছে তখন তাকে বিছানায় শুয়েই থাকতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে এর চিকিৎসা সম্ভব হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার।
মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের হরিশচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কোয়ামারি গ্রামের শিশু তানিশা হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তানিশার এখন বয়স মাত্র ১৩ মাস। জন্মের কিছুদিন পর থেকেই এই রোগ-যন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। মাথার ওজন শরীরের ওজনের থেকে বেশি। মাথার ভারে বিছানা থেকে উঠতে পারছে না ছোট্ট তানিশা। দুই পাশে রয়েছে একটি করে ঘা।যার ব্যথা যন্ত্রণা সবসময় ছটফট করতে থাকে ১৩ মাসের এই ছোট্ট শিশুটি।
স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এই রোগের এখানে কোনো চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা সম্ভব হলেও কলকাতায় নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তানিশার বাবা উজির হোসেন পেশায় একজন দিনমজুর। এলাকার ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন তিনি। কখনো আবার ভিন রাজ্যে যেতে হয় কাজের খোঁজে। হরিশ্চন্দ্রপুরের কোয়ামারিতে রোডের ধারে এক চিলতে টালির ছাউনির এক কামরার ঘরে বয়স্ক বাবা-মা স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে কোনরকমে থাকে উজির বাবু। মেয়েকে বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। কারণ যা উপার্জন হয় দিনমজুরি করে তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড থাকলেও কোথায় গেলে ফ্রি তে চিকিৎসা হবে তাও জানা নেই তাদের সঠিকভাবে।
উজির বাবুর স্ত্রী রাজিয়া বিবি জানান,”সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম হয়েছিল আমার মেয়ের। কিন্তু জন্মের কয়েক মাস পর থেকে মাথার পেছনে ফুলে যেতে থাকে। এই রোগ সম্পর্কে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। স্থানীয় ডাক্তারদের দেখায় তারাও কিছু বুঝতে পারেন না। চার মাস পর থেকে মেয়ের মাথা বড় হতে থাকে। হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন কলকাতায় নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। চিকিৎসা না করালে আমার মেয়ে বেশিদিন বাঁচবে না। এই কথা বলতে বলতে কেঁদে ওঠেন রাজিয়া বিবি। বলেন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে আমাদের।
হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান,”এই রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। এখানে তো কিছুই নেই। কলকাতায় পিজি বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গেলে চিকিৎসা হতে পারে। চিকিৎসার পরও কতদূর কি হবে আমার সঠিকভাবে জানা নেই। ছেড়ে গেলেও হয়তো মাথার ফোলাটা পুরোটা কমেনা। নিউরোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করতে হবে। মাথায় সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড জমে রয়েছে। যার জন্য মাথা ওইভাবে ফুলে থাকে। ”
মালদা জেলা পরিষদের শিশু নারী ও ত্রাণ কর্মাধক্ষ্যা মর্জিনা খাতুন বলেন,”এই শিশুটির কথা আমি শুনেছি। জেলার স্বাস্থ্য কর্তা এবং জেলাশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করব এই বিষয় নিয়ে। শিশুটির বাড়ি গিয়েও আমি দেখা করে আসবো। চেষ্টা করব চিকিৎসার জন্য তাদের পাশে থাকার। ”
চিকিৎসা সম্ভব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে উজির বাবুকে। কারণ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের সামর্থ্য যে তার নেই। আর্থিক অভাবের কারণে চোখের সামনে কি মেয়েকে মরতে দেখতে হবে তাদের?অনিশ্চিয়তায় আশঙ্কায় দিন কাটছে অসহায় বাবা মায়ের।