অবতক খবর,২৭ জুলাই,মালদা; গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে গিয়ে মঙ্গলবার সকাল সকাল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক অফিসে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের শাসক দলেরই ১২ জন বিক্ষুব্ধ সদস্য। কিন্তু অনাস্থার কাগজপত্র প্রেস করার আগেই ব্লক অফিস থেকেই অপহরণ হয়ে গেলেন শাসক দলেরই ১১ জন পঞ্চায়েত সদস্য। অনাস্থার বিক্ষুব্ধ মেম্বারদের অপহরণ, তার সঙ্গে পাল্টা প্রধান অপহরণের জেরে উত্তেজনা ছড়াল হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকা জুড়ে। এদিন হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার দৌলত নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাইকোর্টের নির্দেশে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে আসার প্রস্তুতি হিসেবে মঙ্গলবার ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২ জন বিক্ষুব্ধ সদস্য সিগনেচার ভেরিফিকেশন এর জন্য মঙ্গলবার বিডিও অফিসে আসে। সেখানে সদ্ভাব মন্ডপের দোতালায় এই ১২ জন মেম্বার অনাস্থা নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অভিযোগ এমনই সময় হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুবেদা বিবির স্বামী তথা এলাকার যুব তৃণমূল নেতা আশরাফুল হকের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি সশস্ত্র দল ব্লক চত্বরে এসে বিক্ষুব্ধ ওই ১২ জন পঞ্চায়েত সদস্য কে অপহরণ করে। এরমধ্যে বিক্ষুব্ধ সদস্য ও আশরাফুল বাহিনীর মধ্যে ব্লক চত্বরেই হাতাহাতি বেধে যায়। ভাঙচুর চালানো হয় ব্লকের সদ্ভাব মন্ডপের চেয়ার টেবিল দরজা জানলা। গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থা কে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকা ঘিরে। এরমধ্যে ওই বিক্ষুব্ধ ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জনকে অপহরণ করে আশরাফুল বাহিনী বলে অভিযোগ। একজন কোনক্রমে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ মেম্বারদের সঙ্গে আসা তৃণমূল সমর্থকরা ব্লক চত্বর থেকে ফিরে গিয়ে পায়খানা মোড়ে লোহা ব্রিজে অবরোধ চালায়। পুলিশের গাড়ি আটকে চলে বিক্ষোভ,এমনকি এই ঘটনায় পুলিশের সামনে চলে দুই পক্ষের বিরোধ। পুলিশের সঙ্গে ধস্তা-ধস্তি শুরু হয়ে যায়, পরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের নেতৃত্বে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুরো বিষয়টি নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২০টি আসন রয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত দৌলতনগর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে দলেরই আরেক সদস্য পিন্টু কুমার যাদব সহ ১২ জন অনাস্থা আনার জন্য ব্লক প্রশাসনকে স্বাক্ষর সমূহ অভিযোগ জানায়। মঙ্গলবার ছিল ওই ১২ জন সদস্যের স্বাক্ষরের ভেরিফিকেশন। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চরম গোলমাল বেঁধে যাওয়ায় চরম উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে রেপিড অ্যাকশন ফোর্স। থমথমে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকা।
অন্যদিকে অপহৃত হয়ে বিক্ষুব্ধ মেম্বারের শাসকদলের সমর্থক সদস্যরা ফিরে গিয়ে তেল চাননা সুইচ গেট সংলগ্ন প্রধানের ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। এদিকে প্রধান নাজিবুর রহমান গোষ্ঠীর, পাল্টা অভিযোগ প্রধান কেও নাকি অপহরণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তবে প্রকাশ্য দিবালোকে তৃণমূলের শাসকদলের যুব নেতার হাতে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য অপহরণের ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল নেতারা। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। যদিও এই ঘটনাকে ঘিরে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর।