অবতক খবর,২০ জানুয়ারি: মৃণাল সিংহ রায় (আবুদা), সারা পশ্চিমবঙ্গের একটি নাম। তিনি কি ছিলেন, কি করেছেন, সবই সর্বজন গ্রাহ্য এবং সর্বলোকের জানা। তাই এই অঞ্চলে তাঁর এত গুরুত্ব। রাজনৈতিক মনন, সাংস্কৃতিক মনন, ক্রীড়া মনন, সমস্ত দিকে ছিল তাঁর আধিপত্য। সবচেয়ে বেশি আধিপত্য ছিল জনসেবায়। এই মানুষটি বৈপ্লবিক রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। বোমারু ক্ষুদিরাম বসু এবং অস্ত্রী বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী তাঁর ব্যক্তিগত যাপিত জীবনের আদর্শ তা প্রমাণিত।
তাঁর কর্মদপ্তরের নাম ছিল বিপ্লবী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্মৃতি ভবন। তাঁর বাড়িতে ছিল ক্ষুদিরাম বসুর প্রতিকৃতি এবং স্পল্ডিং ইনস্টিটিউট নাম পরিবর্তন করে ক্ষুদিরাম বসু ইনস্টিটিউট করার পেছনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। এই স্পলডিং মাঠে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন লতা মঙ্গেশকর শেষ গানটি গেয়েছিলেন আবুদার অনুরোধে “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি”।
হাজার হাজার বেকারের চাকরি দিয়েছিলেন তিনি রেল দপ্তরে এবং অন্যান্য বেসরকারি ফার্মে হাজিনগরে, কল্যাণীতে। তো সেই আবুদাকে নিয়ে রাজনীতি না করলেই নয়! রাজনীতি বলাটা ভুল হচ্ছে। দলবাজি না করলেই নয়!
কোনো মৃত্যুদিনে এই ধরনের যদি দলবাজি প্রাধান্য পায় তবে কি সেই ব্যক্তিকে স্মরণ শ্রদ্ধা জানানো হয়? না তাঁকে অপমান করা হয়? এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে কাঁচরাপাড়া।
আবুদাকে নিয়ে এক বিশেষ দলীয় রাজনীতি প্রাধান্য পেল। নির্বাচনের প্রাক মূহূর্তে আবুদাকে নির্বাচনী পণ্য করে তোলা হলো বলে বিরোধীরা জানিয়েছেন।
আয়োজকরা ঘোষণায় বারবার বলেছেন, তিনি সমাজসেবী, তিনি সমস্ত ধরনের দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। কিন্তু একটি বিশেষ দলের প্রাধান্য দেখা গেল মঞ্চে এবং তারা আবুদার স্মরণ- শ্রদ্ধার অনুষ্ঠানে যে বক্তব্য রাখলেন তার চেয়ে বেশিরভাগ বক্তব্যই একটি বিশেষ দলের রাজনৈতিক প্রচারে এবং আর একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে তারা তরজা গেয়ে গেলেন। এটা কি নির্বাচনী সভা ছিল? এই তরজা কি এমন একটা দিনে যেখানে রক্তদান উৎসব চলছে তাঁর নামে, যেখানে তাঁর নামে শীতবস্ত্র প্রদান করা হবে, সেখানে এমন পার্টিবাজি, দলবাজির বক্তব্য চলে? মানুষ সেটা মেনে নেয়? আবুদার ব্যক্তিসত্তাকে এতে অসম্মান করা হয় না? এই এ প্রশ্ন স্থানীয় জনসাধারণ তুলে দিয়েছেন তো বটেই এবং অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাঁর শেষ যাত্রায় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে যে জনজোয়ার দেখা গিয়েছিল, যে জনপ্রাবল্য দেখা দিয়েছিল তাকেও অপমানিত করা হয়েছে আজকের দিনে। কারণ মৃত্যুর সময় সমস্ত রাজনৈতিক দলেরা সম্মিলিত ভাবে সেই শবযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজকের মৃত্যুদিবসে বিরোধীদের অভিযোগ,এই সর্বজনপ্রিয় নেতার স্মরণ দিবসে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। কেন এটা হল কি কারণে হল এটার জবাব একমাত্র উদ্যোক্তারাই দিতে পারেন। অনেক অরাজনৈতিক সংগঠনও আমন্ত্রণ পায়নি, কেন এমন হলো?
২০১১ সালে তৃণমূল দলের বিধায়ক পদের যোগ্য প্রার্থীপদ থেকে যখন তাঁকে বঞ্চিত করা হলো তখন আবুদাকে ভালোবাসার এই পরম প্রেমিকরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানান নি কেন? এখন এই লোকদেখানো প্রেম কোন স্বার্থে? তাঁর শেষ জীবনে এই সব নকলি প্রেমিকরা আবুদার পাশে থাকা তো দূরের কথা ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় নি।এখন আবুদা হাওয়া তোলার একটা প্রয়াস চলছে বলে মনে হয়। আবুদা কি নির্বাচনী পণ্য হবেন?
প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে প্রচলিত একজন ছাত্র শহিদ অশোক মিত্রর নামে রাস্তার নাম পরিবর্তন করে আবুদার নামে উৎসর্গ করে কোন প্রেম বা বাহাদুরি দেখালেন কর্তৃপক্ষ, না আবুদাকে অপমান করলেন, জানতে চাইবেন না জনসাধারণ?
হায়! কাঁচরাপাড়া। তুঝে সেলাম।