আজ আন্তর্জাতিক অনুবাদ দিবসঃঅবতকের বিশেষ প্রতিবেদন
হিজাব যখন জ্বালানি কেশদাম যখন পতাকা হয়ে ওড়ে তখন সেই ভাষার অনুবাদ কেমন
তমাল সাহা
আজ বিশ্ব অনুবাদ দিবস। ছোটবেলা থেকেই অনুবাদ শব্দটি শুনে আসছি। ইংরেজিতে একে বলে ট্রানস্লেশন এও জানি। অনুবাদ মানে তো ভাষান্তর্ অন্য ভাষা হৃদয়দ্রাবী করে স্বকীয় ভাষায় উপস্থাপনা।
অনুবাদের সঙ্গে কি বাদানুবাদের সাহচর্য আছে? আমরা সত্যিই কি নিজেদের ভাষাই বুঝতে পারি? প্রেমিক-প্রেমিকা কি তাদের হৃদয়জাত ভাষার অনুবাদ করতে পারে? ভালোবাসা তবে দাম্পত্য জীবনে বা একটি জীবন আরেকটি জীবনের পারস্পরিক সাহচর্যে বাদানুবাদ হয়ে ওঠে কেন? তোমার শাসকই কি তোমার ভাষা উপলব্ধি করতে পারে না, অনুবাদ তো দূর অস্ত!
অাবিশ্ব অন্ধকারের ছায়াপাত। সব অন্ধকারের ভাষা এক। সুতরাং অনুবাদে বৈচিত্র নেই। হিংসার বৈশ্বিক অনুবাদ যদি রাষ্ট্রীয় মস্তানরা বুঝতো তবে আকাশে কি এত বিস্ফোরকবাহী বিমান উড়তো– বিস্ময়কর আলো আগুন ও শব্দের সমারোহে জনপদের পর জনপদ বিধ্বস্ত হতো, উড়ে যেত কারখানার ছাউনি দুধ ফ্যাক্টরির শেড?পদাতিক বাহিনীর ট্যাঙ্ক কামান মেশিনগানের সক্রিয়তায় মানুষের পলায়ন-পর্ব সংঘটিত হতো, দৃশ্যমান হতো আতঙ্কিত মায়েরা শঙ্কিত শিশুর হাত ধরে অজানা উদ্দেশ্যে ছুট অথবা পড়ে থাকত ধর্ষিতা নারীদের দেহ?
ভারত মহাসাগরের উপকূলে এখন দাঁড়িয়ে আছি। দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষ, অন্য ধর্মী মানুষের ভাষা– নিজের জাতির হৃদয়ে কাঙ্ক্ষিত ভাষারই অনুবাদ করতে ব্যর্থ তোমার আমার এই রাষ্ট্র।
ধর্ষণের ভাষা, রক্তাক্ত শরীরের ভাষা, দাহ্য শরীরের ভাষা, জাতিগত ধর্মগত সাম্প্রদায়িকতার যে ভাষা তার অনুবাদ কী হবে! সে তো হবে শুধু আর্তনাদ আর চোখে জলের বহমান অসংখ্য জলপ্রপাতের ভাষা।
আজ এই মুহূর্তে পর্যটকের ভূমিকায় আছি। পারস্য উপসাগরের উপকূলে পড়তে শিখছি খণ্ড খণ্ড চলমান দৃশ্যচিত্রের ভাষা।
দেখছি ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনীর নিথর দেহ নীরব মুখ বেরিয়ে আসছে হাসপাতাল থেকে। রাষ্ট্রের হাতে নিহত তরুণী। সত্যিই কি নীরব সেই মুখ? এই মুখের ভাষা অনুবাদ করতে আমি জানি। এর জন্য ভাষাশিক্ষার প্রয়োজন পড়ে না আমার। আমি দেখছি প্রতিবাদী গুলি খাওয়া নিহত দাদার কফিন। কফিনের ওপর শ্রদ্ধার ফুল হয়ে ফুটে আছে বোনের কর্তিত কেশদামের স্তূপ। সোচ্চারিত দাদার সেই প্রতিবাদী মিছিলে যোগ দিতে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে বোন। এ ভাষার অনুবাদ কে না জানে? তরুণীদের কুন্তল রাশি পতাকা হয়ে উড়ছে, হিজাব পোড়া ছাইয়ের লড়াকু গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, বুট আর বুলেটের তাণ্ডব– পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে বুকে মুখে ছটা গুলি খেয়ে ঝাঁঝরা তন্বী হাদিস নাসাফির জীবন্ত শরীর পড়ে আছে রাস্তায়।
মিলিটারি ও মানুষ মুখোমুখি, রাষ্ট্র ও নাগরিক মুখোমুখি— এই বিরুদ্ধ ভাষার বৈশ্বিক অনুবাদ কবেই হয়ে গিয়েছে!