আজ বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন।
অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদন
আজ তার জন্মদিন। প্রেমাংশুর রক্ত চাই, চাষাভুষার কাব্য, দূর হ দুঃশাসন– এই তিনটি কাব্যগ্রন্থের নিমগ্ন পাঠ দিয়ে আমার তার কাছে পৌঁছনোর যাত্রা শুরু। সত্তর দশকে তার কবিতা দেশ পত্রিকায় ছাপা দেখেছি।
22 নভেম্বর 2019 বাংলাদেশ গিয়েছি, কবিতা পাঠের আমন্ত্রণে শালুক পত্রিকার ২০ বছর পূর্তির আয়োজনে।বাংলাদেশের সুপরিচিত উপন্যাসকার-গল্পকার হামিদ ভাই নিয়ে এলেন বাংলাবাজারে। আপনে গো কলেজ স্ট্রিটের মতন হইল এই পুরানো বাংলাবাজার। আরেকটু দূরেই আপনেগো কফি হাউসের মতন আড্ডার জায়গা বিউটি বোর্ডিং।
বাংলাবাজারে শিখা প্রকাশনীর বইঘরে আমাকে নিয়ে বসালেন হামিদ ভাই। প্রকাশক নজরুল ইসলাম বাহার। তিনি বলেন,দাদা আইলেন কবে? আমি বলি, দুই দিন হইলো আইছি।ওই হাফিজ! চা লইয়া আয়! বিস্কুটও আনিস কিন্তু।
একে একে চলে এলেন বিশিষ্টজনেরা আড্ডা দিতে।মোঃ আবুল বাশার ফিরোজ শেখ।ইনি সেক্রেটারি অফ মেম্বেরস বুক ফেয়ার স্ট্যান্ডিং কমিটি। আরো প্রকাশনের কর্ণধার আলমগীর মল্লিক। ইনি বাংলাদেশ শিশু-কিশোর প্রকাশ পরিষদের সভাপতি। দেখা হল পলাশ প্রকাশনীর মালিক খুরশিদ আনোয়ার জসীমউদ্দীনের সঙ্গে।এই ব্যক্তির পিতা কে? বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে যার কাব্যভাষ্য সেই জসীমউদ্দীনের পুত্র ইনি। সখ্য গভীর হলে অনুভব প্রাণের হয়ে ওঠে। সৌহার্দ্য কতদূর যায়! খুরশিদ ভাই বলেন, আমার বাসায় আউজকা থাইক্যা যান। রাইতে রেড ওয়াইনের পার্টি দিমু। এইসব প্রকাশকদের কাছে ভারত ও বিদেশ যাতায়াত জলভাত এমনই মনে হলো।
সাহিত্য নিয়ে আড্ডা হল। আলোচনায় উঠে এলো কাব্যগ্রন্থের কথা। বাংলাদেশের কবিকুলের কথা। আমি জিজ্ঞেস করি,এখানে বইয়ের বিশেষ কইরা কবিতার বইয়ের বেচাকেনা কেমুন? আলমগীর বলেন, এইখানে বেচাকেনা ঠিকই আছে। আমি বলি, কবিরা টাকাপয়সা ঠিকমতো পায়? তিনি বলেন, পাইবো না ক্যান? তারা তো কালেকশনের লিগা প্রকাশকের কাছে আসে! প্রকাশক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার আইশ্চর্য লাগে নির্মলেন্দু গুণ ও মহাদেব সাহার মতন কবিরা কোনোদিনও প্রকাশকের দুয়ারে টাকা চাইতে আসেন না।
আজ সেই নির্মলেন্দু গুণের জন্মদিন। মুজিব সম্পর্কিত প্রথম কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুজিবের বিরোধিতা করেছিলেন। মুজিবের বাকশাল গঠন তার পছন্দ হয়নি। যেখানেই অন্যায় সেখালেই নির্মলেন্দু গুণ।
প্রেম প্রতিবাদ স্বৈরাচারের বিরোধিতা শ্রেণিসংগ্রাম দ্রোহ এমনকি মানুষের স্বাভাবিক জীবনের যৌনতাও তার কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায়।
অক্ষরের হাত
তমাল সাহা
তুমি কি এখনো হেঁকে চলেছো? দূর হ দুঃশাসন।
তুমি আসলে কবি সন্ন্যাসী,না কাপালিক কিছুই তো বলোনি।
রক্ত নদীতে ডুবিয়ে পা হেঁটে চলেছো…
বলে চলেছ, মাটি খুঁড়ে পাচ্ছি কঙ্কাল, এখনো বীছতলা খুঁজে পাইনি।
তুমি চাও এমন একজনকে যে প্রশ্ন করুক
তোমার চোখ এতো লাল কেন? তোমাকে না ভালোবাসুক, নিয়মিত প্রশ্ন করে যাক, ভালবাসা থাকুক বা না থাকুক,থাকুক অনুচ্চারিত অনুরাগ।
যতই তুমি আক্রোশ লেখো আমি তো বুঝতে পারি, তোমার অন্তর্লীনে বাস করে এক স্বপ্নীয় নারী।
শরীর জুড়ে নিহিত ঐশ্বর্য প্রাকৃতিক,
এ কোন বইয়ের পাতায় দেখি সব, খুঁজে পাই সব ভৌগোলিক।
তুমিও স্বাভাবিক রমণে বাস্তব হয়ে ওঠো কি? রান্নাঘরে গিয়ে চুম্বন রাখো প্রেমিকার স্তনে। স্নানঘরে ছুটে যাও নগ্ন শরীর আচমনে।
নক্ষত্র বীথি জ্বলে কত কি সাজাও তুমি অনন্ত অক্ষরে। তুমি তার দিকে তাকিয়ে বলো,যেদিকে ফেরাও চোখ সেদিকে পৃথিবী পোড়ে।
স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো,কীভাবে জানতে পারলো স্বাধীনতা শব্দটি। কারখানার কামগার খামারের চাষি,অস্ত্র হাতে তরুণ, মধ্যবিত্ত, কিছু না পাওয়া সাধারণ জন, মধ্যবিত্ত, কেরানি, বেশ্যা, বৃদ্ধ ও ভবঘুরে—
তুমি আমাকে বলেছিলে তখনই পায় যখন একটি মানুষ নেতা নয়, স্বজন হয়ে ওঠে মানুষের ঘরে ঘরে।
নিরাকার অপ্রত্যক্ষ সব শুধুই ছলনা। তুমি নাস্তিক সোচ্চারে করো ঘোষণা।
স্ট্রেট কাট বলতে জানো, আমি তোমাকে, শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তোমার জন্যই হতে পারি কাছে থেকেও পরবাসী।
তোমার নামে হুলিয়া জারি হলেও কেউ চিনবে না।
প্রশ্নের পর প্রশ্নের কোনো জবাব দেবেনা তুমি।
গোয়েন্দারা নাজেহাল, ফ্যালফ্যাল চোখে থাকবে তাকিয়ে, তুমি দেখবে শুধু তোমার জন্মভূমি।
তুমি কত সহজে, হ্যাঁ তুমি ঠিক খুঁজে পেয়েছো জায়গাটি।
ওটাই বুক, তার নীচেই রয়েছে হৃদয়, তুমি আমার জয়ী, আমি তোমার জয়।
আমরা দাসবংশের লোক। আপনারা উর্ধ্বাঙ্গে নিম্নাঙ্গে মাখেন স্প্যানিশ অলিভ অয়েল। চকচক করেন বেগম সাহেবার পাছা,আমরা বস্তিবাসী আমাগো মা বছর বিয়োনি,জন্ম দেয় গোছা গোছা।
সোহাগ কইরা ডাকে, তুই আমার বাদশা,তর নাম আদুরে গোপাল,কাছে আয় বাছা।
তুমিই তো সেই কবি দেখো, শোনো–
দিগ্বলয় জুড়ে আলো আগুন শব্দের যুদ্ধনাদ,
বাতাস বয়ে নিয়ে যায় শুধু আর্তনাদ।
তোমার পংক্তিমালা হয়ে ওঠে আশ্চর্য প্রবাদ—
যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা
যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা।