আজ হুল দিবসঃ অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন 

প্রথম গণজমায়েত, প্রথম লঙ মার্চ- রাজমহল থেকে কলকাতা নারী পুরুষের সম্মিলিত মিছিল শিখিয়েছিল আমাদের আদিবাসী জনজাতিরাই, সশস্ত্র মিছিলেরও প্রকরণ ও কৌশল শিখিয়েছিল তারাই হুল-কে কেন্দ্র করেই।সে লড়াই ছিল সাচ্চা লড়াই প্রকৃতি রক্ষার লড়াই, জল জমি জঙ্গল খনিজ রক্ষার লড়াই, জমিদার জোতদার দিকুর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা। রেড স্যালুট শহিদদের প্রতি। রক্তিম অভিনন্দন!

মু আবার আইসবেকঃ কানু মুরমু

তমাল সাহা

আরে, ধামসা মাদল সাফসুতরো কইরে রেইখেছিস তো বুট্যে?

কাল হইল্য হুল দিবস।

মুরা আদিবাসী জনজাতিরাই পেরথম গণজমায়েত কইরেছিলাম ভারতবর্ষের মাটিতে।

উ জমায়েত হইছিল ভগনাডিহির মাঠে।

আর শুন, মুরাই পেরথম জঙ্গি নারী বাহিনী তৈয়ার করলম।

ই ভগনাডিহির মাঠ থিকে মিছিল কইরে গেছিলাম

হুই কইলকাতা।

ত্রিশ হাজার সান্তাল সে কী চাট্টিখানিক কথা বুট্যে!

সঙ্গে মুদের মা-বোনেরাও ছিল।

ই ছিল অস্ত্র লিয়ে মিছিল– তীরধনুক,কুড়াল, টাঙ্গি,বল্লম। আর?

ধামসা,মাদলের সে কী আওয়াজ, বাপরে বাপ!

তুরা বলিস স্লোগান, মুরা বলি ডাক– শাল গিরা! শাল গিরা!দিকু, মহাজন,দালাল খতম কইরতে হবেক/ কিষানরাজ কায়েম কইরতে হবেক….

ইর পর মাসের পর মাস সে এক লড়াই বুট্যে!

শেষ পর্যন্ত মুদের নেতা সিধুকে উ শালা ইংরেজ দিকুরা গুলি কইরে মারলে!

ভগনাডিহির পাচকাঠিয়াতে যে বটগাছটো ছিল সিখানে ফাঁসির বেদি বানাইন দিল দিকুরা।

উখানে কানুকে ফাঁসিতে লটকাইন দিল দিকু জল্লাদরা।

তারপর?

তারপর উখানেই পঁয়তাল্লিশ মিনিট ঝুইলে রইল্য কানুর মজবুত শরীরটো।

তারপর শরীরটো নামাইয়ে উখানেই জ্বাইল্যে দিলে!

কানুর পরিবারটোর কাছে উর মরা শরীরটো পর্যন্ত তুইলে দিবার ভয় পাইচ্ছিল হারামি দিকুরা!

ভাগলপুরের কাছে যে ভয়ঙ্কর লড়াইটো ছিল সেখানে জীবনটো দিল্যে চাঁদ,ভৈরো।

যে বুনেরা সামনের সারিতে ছিল তারা হল্যে ফুলো মুর্মু আর ঝালো মুরমু–

উদের নামটো শুনিস লাই!

শালো ইংরেজ সেনারা ঝালোর সোমত্ত শরীরটো

হাপিশ কইরে দিলে!

আর দিকুরা ফুলোর ইজ্জত তো নিল বট্যে

তারপর খুন কইরে

রেল লাইনের ধারে ফেইলে রেইখ্যেছিল।

তুদের ইসব ভুললে চইলবেক?

আরে, হুল তো মুদের জীবনসঙ্গীত।

মুরা শুধু হুল- উলগুলান বুঝি।

হুলের আসল কথাটো হইল্য,

জঙ্গল জমি জিরেতের অধিকার চাই

মুদ্দা কথা, আদিবাসী রাজ চাই।

আর কান খুইলে শুইন্যে লে কানু ফাঁসির মঞ্চে উঠ্যে কি বুইলেছিল—

তুদের কুনো ভয় লাই রে, ভয় লাই।

তুরা, তুরা থাক।

মু আবার আইসবেক।

আবার হুলের আগুন জ্বাইলবেক।