কাঁচরাপাড়ায় ঐতিহাসিক দাঙ্গা এবং গান্ধীজির আগমন

আজ গান্ধিজির মৃত্যু দিবস। তাঁকে আমরা ডাকি Father of the Nation। সুভাষচন্দ্র রেঙ্গুন কুচকাওয়াজে গান্ধিজিকে জাতির জনক বলে ঘোষণা করেছিলেন। গান্ধিজির মৃত্যুদিনে তাঁর কাঁচরাপাড়ায় আগমনকে আমরা স্মরণ করছি।

আমরা যাকে দাঙ্গা নামে অভিহিত করি সেই দাঙ্গা স্বাধীনতার সাল অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ১৫ থেকে ১৭ই আগষ্ট তিনদিন ধরে চলতে থাকে কাঁচরাপাড়া শহরে। বিভিন্ন জায়গায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রেল স্টেশন অঞ্চলে,
প্রিয়নাথ রোডের বড় ড্রেনের কার্লভাটের ভেতর,স্পলডিং রোডের পাওয়ার হাউসের কাছে দেহগুলি পাওয়া গিয়েছিল।

রক্তপাত হতেই থাকল। মানিকতলার গোরস্থানের কাছে গুলি চলেছিল। এখানে বিকেলের দিকে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন রেলের ডাক্তার বৈদ্যনাথ মুস্তাফি। সেদিনই স্কুল থেকে প্যারেড করে ফেরার পথে হার্ণেট স্কুলের ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের ডান ও বাঁ পায়ে সবসুদ্ধ চারটে ছররা ও তিনটি গুলি বিঁধে গিয়েছিল।

মুরগিপাড়া,সতীশ নন্দী রোড ছিল উত্তেজনায় টানটান। কিছু দেহ পড়েছিল তখনকার পাঁচিল ঘেরা কবরস্থান ময়দানে। অবস্থা এমন হয়েছিল যে,সান্ধ্য আইন জারি করতে হয়েছিল। রাস্তা দিয়ে চলছিল ফৌজি টহল।

কাঁচরাপাড়ার এই উত্তেজনা প্রশমিত করতে কাঁচরাপাড়ায় গান্ধীজিকে আনা হয়েছিল। ১৯শে আগস্ট শান্তিসভার আয়োজন করা হয়েছিল স্পলডিং মাঠে। সেই জনসভায় মহাত্মা গান্ধি,সোরাহবর্দি ও অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষ ভাষণ দিয়েছিলেন। সোরাহবর্দি সাহেব নিজে হুডখোলা জিপ চালিয়ে গান্ধিজিকে নিয়ে এসেছিলেন।

সেই সমাবেশের সাক্ষী ছিলেন অঞ্চলের সুপরিচিত গোষ্ঠবিহারী দে। তিনি সেই দৃশ্যপটটি বন্দী করে রেখেছিলেন তাঁর পাঁচ টাকায় কেনা এন সাইন ইন্ডিয়া ক্যামেরাতে।

জাতির জনক গান্ধিজি কাঁচরাপাড়ায় এসেছিলেন, এই আয়োজনে সাহায্য করেছিলেন এই অঞ্চলের সুপরিচিত বিপ্লবী বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি এবং স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা।

গান্ধিজির মৃত্যুতে স্মরণ সভারও আয়োজন করা হয়েছিল। গান্ধিজির জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের ফটোচিত্র ও বিভিন্ন লেখকের রচনা সম্বলিত একটি আকর্ষণীয় স্মারক পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন গান্ধিজি স্মরণ কমিটি।এটি কাঁচরাপাড়ার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তো বটেই ইতিহাসও হয়ে থাকবে।