ই শালোর দেশ ভারতবর্ষ! তুমরা কুনোদিন শুইনছ প্যাটের দানাপানির লিগ্যে রিশন কার্ডও বইন্ধক লেয় সুদখোরেরা!
আত্মহত্যা রোজ রাতে
তমাল সাহা
মুই যদি বুলি আইজ চতুর্দশীর রাইতে চাঁদ উইঠবার আগে আত্মহত্যা কইরবেক তবে কি আকাশের চাঁদ চমকাইন উইঠবেক?
করোনার রাইতে চাঁদকে কিমন দেখায়!
সে কি আগের মতোই জ্যোৎস্না ছড়ায়?
তু কি কুখনও গিয়াছিস পুরুল্যায়?
লাল কাঁকুড়ে মাটি দেইখ্যেছিস কুনোদিন?
দেইখ্যেছিস সিখানে মানুষ কিমন কুইরে বাঁচে?
মানুষ বুইল্যে কথা!
আরে শালো উরা কি সেই মানুষ!
উরা তো নীচু জাইতের মানুষ।
উরা তো ডোম গুষ্ঠির মনিষ বুট্যে।
পিট্যের টানে লোকে শুনি জমি বইন্ধক দেয়, বাসনপত্তর বইন্ধক দেয়,
সোনার গহনা বইন্ধক দেয়।
ইখানে আইস্যে আমি চমকাইন যাই।
ই শালো কিমন দেশ রে? কিমন গাঁও?
ইখানের মানুষ রিশন কার্ড বইন্ধক দেয়!
তু চিনিস উদের?
শ্যামলা কালিন্দী, ইন্দিরা কালিন্দী, রাধা কালিন্দী, ভগীরথ কালিন্দী।
ইসব নাম তু শুইন্যেছিস কুনোদিন?
বুল তো ইরা কুইনখানে থাইক্যে?
থাইক্যে হলো,শুন–
মহকুমা ঝালদা, গ্রাম সর্যুমাতু।
ইরা খাবার লিগ্যে, চিকিৎসার লিগ্যে,
মেয়ের বিয়ের লিগ্যে রিশন কার্ড বইন্ধক দেয়। নিজেদের পিট্যের দানাপানির ইকমাত্র পরিচয় হইল্য ই রিশন কার্ড।
ইদের ত ইরা ছাড়া আর কুনো সম্বল লাই।
বইন্ধক বাবু বুলে, উ তো আমি জানি ব্যুটে। তুর হাতে তো রিশন কার্ড আছে, না! উটা আমাকে দিয়ে দে বুট্যে।
ইখানে নয়া ঢঙের সুদের কারবারি।
ইরা ইখানকার মানুষের পুরা প্যাট মাইরে সাবাড় কইরে দ্যায়।
ইখন লকডাউন চইলছ্যে।
সরকার বইলছ্যে বিনে পয়সায় খাবার দিবে বুট্যে।
কিন্তু কার্ড তো উইড়ে গ্যাছে বইন্ধক বাবুর কাছে।
ইদের ইখন কুনো কাম লাই, কাজ লাই।
কী হবেক উদের?
রিশন কার্ড নাই। মাগনায় তো রিশন মিলবেক নাই।
আরে ! সর্যুমাতু গিরাম। জিলা পুরুল্যা।
কিমন আছিস তুই?
বইন্ধক বাবু বুললেন, দুজনের কার্ড মু বইন্ধক রিখ্যেছি বাইশ হাজার টাকায়।
উরা মুর থিক্যে বাইশ হাজার টাকা লিছে। বাইশ হাজার টাকা দিয়ে দিবে ত কার্ডও লিয়ে লিবে!
ইখন ইরা বাইশ হাজার টাকাটো পাবে কুথায়?
উন্নয়ন! উন্নয়ন! বুইল্যে বাতাস উড়াল দিয়ে চইল্যে গেলো সর্যুমাতু গিরামের উপর দিয়ে জিলা পুরুল্যায়….