লক ডাউন। জনজীবন স্তব্ধ। যেন লক আপে আছি। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চলে গেলেন ১৪ মে,২০২০। বাক্যটি কি সঠিক হলো? তিনি এপার ওপার দুই বাংলার সঙ্গেই সম্পূর্ণভাবে জড়িত ছিলেন। বাংলা ভাষা- বাংলা সাহিত্যকে তিনি অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন, লড়েছেন। ঘরে বসে যেমন লিখেছেন তেমন সমপরিমাণে রাজপথে নেমে মিছিলে হেঁটেছেন, সময়ের পদাতিক হয়েছেন বাংলাভাষা ও দেশের জন্য।
আনিস স্যার
তমাল সাহা
আনিস স্যার! আপনি আমাকে চেনেন না।
আমি আপনাকে চিনি ও জানি
কিন্তু আপনাকে কখনো দেখিনি।
এত ছাত্র আপনার।
আপনি কত মুখ মনে রাখবেন!
আমাদের দায়িত্ব আপনার মুখ মনে রাখার।
আমি আপনার মুখ মনে রাখি।
আপনিই বলেছেন, বিপুলা পৃথিবী।
আমার জানবার দরকার নেই
আপনি বসিরহাটে জন্মেছিলেন কি না
কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে পড়েছিলেন কি না
এন্টালির ক্যান্টোফার লেনে থাকতেন কি না
খুলনা জেলা ইস্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন কি না
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কত বড় প্রফেসর ছিলেন,এও আমার জানার দরকার নেই।
আমার যা জানা দরকার
এক, আপনি জন্মেছিলেন
দুই, পড়াশুনা করেছিলেন
তিন, বাংলা ভাষার জন্য লড়েছিলেন
চার, পান্ডিত্যের অহমিকা বর্জন করে মানুষের সঙ্গে সক্রিয় লড়াইয়ে পথে নেমেছিলেন ভাষা আন্দোলনে এবং মুক্তিযুদ্ধে।
আপনাকে যদি লড়াকু শিক্ষাবিদ বলা হয় তাহলে কি সত্যি ভুল হবে?
আপনি কটা পুরস্কার পেয়েছিলেন
আমার জানার দরকার নেই।
আমার দরকার আপনি আমাদের জন্য কি কি রেখে গিয়েছেন।
আমি জানি
আপনি কত ঐশ্বর্য রেখে গিয়েছেন
আমাদের সকলের জন্য মুদ্রিত অক্ষরে।
বিদগ্ধজনেরা তো ঘরে বসেই লেখেন। আপনি ঘরের বেড়া পেরিয়ে পথেও হাঁটতেন আমাদের কাঁধে হাতে রাখতেন।
আমি আরও জানি
মৌলবাদী হত্যার হুমকি আপনি কত সহজেই উপেক্ষা ও অগ্রাহ্য করেছিলেন। আপনি বলে গিয়েছেন– ‘আমাদের পথ চলা একসময় থেমে যায়, জীবন থামে না।’