ওরা কি ফিরবেনা? নদিন হতে চলেছে পার..

আমি হাঁটিতেছি সিল্কিয়ারা টানেলের দিকে
তমাল সাহা

হেমন্ত এসেছে। প্রকৃতি এখন একটু অন্যরকম। ধূসর বিষাদ চেহারা নিয়ে চলে আসে। আমি এখন হেঁটে চলেছি উত্তরাখণ্ড উত্তরকাশীর দিকে…

মার্কিন মেশিনে ড্রিলিংয়ের বুক দাপানো আওয়াজ শুনতে পাই। রোবট কোনদিন দেখিনি। রোবট দেখবো বলে তবে ‘সেসব দৃশ্য’ যেন না দেখতে হয় কপালে হাতজোড় প্রার্থনা করে আমি সিল্কিয়ারা টানেলের দিকে হাঁটতে থাকি…

গাঙ্গেয় দীপদান উৎসবে মজেছিলাম
অযোধ্যায় বাইশ লাখ প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল। ‘প্রদীপের নীচে পড়ে থাকে আদিমতম অন্ধকার’- এই বাক্যটি অনেক বার শুনেছি, বারবার শুনলেও এই বাক্যবন্ধটিৎআমারৎকাছে ক্লিশে হয় না
পোড়া দেশের পোড়াকপালে মেয়েরা পোড়া তেল প্লাস্টিকের বোতলে সংগ্রহ করে। নিভু নিভু প্রদীপের আলোতে তাদের মুখের বেশ কিছুটা অংশ উজ্জ্বলও দেখায়।

হঠাৎ শুনি অদ্ভুত এক কণ্ঠস্বর হুবহু জীবনানন্দের গলার স্বর যেন—-
এই চুতিয়া গাড়ল দেখিতেছে অন্ধকার, বিপুলতম কায়া নামিয়া আসিয়াছে অপহৃতা সীতার আলু থালু চুলের মতো পুরাতনী বিভঙ্গে
রাবণ সোমত্ত হাতে সীতাকে চেপে ধরে দুরন্ত বেগে ছুটতে থাকে…

গাঙ্গেয় পারে দীপাবলীর আলো নিষ্প্রভ করে ফরাসডাঙ্গায় জগদ্ধাত্রী জ্যোতির্ময়ী মুখে এক থাবলা অন্ধকার ছুড়ে দিয়ে
ছট পুজোয় সূর্য রশ্মিকে গাল পাড়তে পাড়তে আমি হাঁটতে থাকি নিষ্ঠা একাগ্রতা শ্রম সংহতির যৌথ মিলনে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের দিকে
চারধাম সড়ক প্রকল্পের রূপায়ণে নভেম্বর বিপ্লবের মাসে হেমন্তের শোকসন্ধ্যা নামিতেছে
নবম দিন পেরিয়ে যায়…
মৃত্যুর দোলনা দুলতে থাকে ত্রস্ত একচল্লিশ জন শ্রমিকের ভয়স্তব্ধ চোখের তারায়

মৃত্যু জীবনের জন্য অপেক্ষা করে অথবা জীবন মৃত্যুর প্রতীক্ষায় আছে!
কত সব পরিকল্পনা ঘোরে ডিজিটাল মেশিন বসানো প্রযুক্তিবিদদের মাথায়!
লম্বা লম্বি সুড়ঙ্গ কাটা হতে থাকে,তা ভেস্তে গেলে নতুন আড়াআড়ি সুড়ঙ্গ কাটা হবে। নতুন নতুন প্রকল্পের সৃজন দেখতে থাকি চার ইঞ্চি পাইপ ছয় ইঞ্চি হয়ে যায়।
শুকনো খাবার ফলমূল কাজু কিসমিস ওষুধ অক্সিজেনের গল্প শেষ হতে থাকে,
কুলি মজুর মরলে আমাদের কী আসে যায়!

প্ল্যান-এ, প্ল্যান-বি প্ল্যানের পর প্ল্যান…
প্ল্যানিং ছক্কা পাঞ্জা হতে থাকে।
উৎসবের ঋতু এখন।
কদিন বাদে রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে, আমরা আছি মৌতাতে।
চারধাম একচল্লিশ জন শ্রমিকের প্রাণ বাঁচাতে পারে কিনা
দেখি রুদ্ররাজ কোন মঙ্গল শঙ্খ বাজায় কোন হাতে!

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আঠারো দিনে শেষ।
এদিকে যুদ্ধের নবম দিন পার।
আমি চেয়ে থাকি চার ধামের মাথার দিকে পাহাড়ের উপরে ঢাল বেয়ে নেমে আসে সূর্যের আলোর বাহার

একচল্লিশটি পরিবার শুধু কপাল চাপড়ায়।
তুফানগঞ্জের চেকাডেরা গ্রামের সীমা নামের নারীটি তাকিয়ে আছে প্রিয়তম স্বামী মানিকের ছবিটি হাতে করে।
তুমি কী শুনতে পাও
পুরশুড়ার হরিণাখালির বাসিন্দা জয়দেব পরামানিকের বাবার বুকচাপা আর্তনাদ?
তুমি কী পড়তে পারো নিমডাঙ্গির সৌভিক পাখিরার বিপর্যস্ত মায়ের মুখ-চোখের ভাষা!

ইতোমধ্যে নির্মাণ কর্মীদের বাঁচাবে বলে টানেলের মুখে বসে গিয়েছে মন্দির
দিল্লিতে হনুমান মন্দিরে পুজো।
হনুমান একচল্লিশ জন শ্রমিককে করবে উদ্ধার– কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসতে পারে আজও!

দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে কামগার-পরিবার।
প্রতীক্ষায় তারা কি পাবে গবেষণা চলে….
অঘ্রাণের হিম ঝরা রাতে আকাশ প্রদীপ জ্বলে!