অবতক খবর,৩১ মার্চ: ঈদের আনন্দে মেতে ওঠা মানুষের মাঝেও নেমে এলো শোকের ছায়া। সকাল থেকেই দুর্গানগর সহ আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। নতুন পোশাক পরা শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ ঈদের নামাজ আদায়ের পর খুশিতে মেতে উঠেছিলেন। মিষ্টি, দই, লাচ্ছা সহ নানা সুস্বাদু খাবারে ঘরভর্তি আনন্দ ছিল সবার। কিন্তু সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলো পরিণত হলো চরম বেদনার স্মৃতিতে, যখন এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা।
দৌলতাবাদ থানার অন্তর্গত দুর্গানগর, নরনারায়নপুর, অভিরামপুর, দেবীপুর, গোপীনাথপুর, পোলেপাড়া ও দাদপুর—এই সাতটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত বৃহৎ মাঠে হঠাৎই আগুন লেগে যায়। কে বা কারা গমের খড়ে আগুন ধরিয়ে দিলে মুহূর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র মাঠে। একসময় সেই আগুন এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে, চারদিকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে আগুন নেভানোর জন্য ছুটে আসে, কিন্তু ততক্ষণে বহু কৃষকের ফসল দাউদাউ করে পুড়ে যায়।
আগুনের প্রকোপ এতটাই বেশি ছিল যে, তা দুর্গানগরের কবরস্থানেও ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত ছুটে এসে এলাকাবাসী কবরস্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে অনেকেই তাদের জমির ফসল রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে গম, পটল, মসূরী, গহমা, তিল, ভুট্টা সহ বহু ফসল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের মাসের পর মাস ধরে লালন করা ফসল এক নিমেষেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমরা চাই এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক এবং দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” অন্যদিকে, চাষি হাবিব মণ্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দৌলতাবাদ পুলিশ প্রশাসন থেকে স্পষ্ট নিষেধ করা সত্ত্বেও গমের খড়ে আগুন লাগানো হলো কেন? আমরা চাই এর সঠিক তদন্ত হোক এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক।” টিংকু সেখ জানাই,- “আমার দশ কাটা জমির গম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ক্ষতিপূরণ না দিলে আমার বড়সড়ো লোকসান হয়ে যাবে।” এছাড়াও টিপু সুলতান বলেন, আমরা দ্রুত ছুটে এসে আগুন না নেভালে আমাদের কবরস্থান পুরোটা দাও দাও করে পুড়ে যেত, যে আগুন দিয়েছে সে চরম অন্যায় করেছে।”
এলাকার মানুষ ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অবশেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে এতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তাদের ক্ষতি পূরণ করা হোক, যাতে তারা আবারও নতুন উদ্যমে চাষাবাদে মনোযোগ দিতে পারেন।
ঈদের খুশির দিনে এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এলাকাবাসীকে শোকে নিমজ্জিত করেছে। তারা প্রত্যাশা করছে, প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই দুর্যোগের সঠিক বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।