উল্টোরথ , চাঁপা ও গোরস্থান
তমাল সাহা

বারান্দায় হাঁটু জল। রাস্তায় কোমর জল। বৃষ্টি এতো ঘন হলে বেরোনো যায়?
রথের মেলা কি জানে এসব দুঃখ বিষাদ বেদনার কথা?
জগন্নাথ ঠুঁটো হলেও সে জানে রথের মেলার দিনটি ভেস্তে যেতে পারে বৃষ্টিতে।
তাই তো সে ফিরে আসে উল্টোরথে।

সোজা রথে যখন আশা মেটেনি তখন উল্টোরথ ছাড়া আর উপায় কি?
অদূরে কাঞ্চনপল্লী। কৃষ্ণ রাইজির মন্দির। মন্দিরের বাইরের চত্বরে বটগাছতলায় সে বিশাল লোহার রথ।
সে আমার আমার কাছে মন্দিরের কাহিনী শোনে খুব মনোযোগ দিয়ে।
বলি,চৈতন্যদেব এসেছিল এই পাড়ায়। তাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাই মন্দিরের গর্ভগৃহ, রান্নাবাড়ি, অতিথিশালা, পুরোহিত কক্ষ, সিংহ দুয়ার, তুলসী মঞ্চ আর দেয়ালের সব কারুকাজ। সে বলে, তুমি খুব ভালো। বুঝি, আবেগ এসেছে।

মন্দিরের সামনে প্রবেশ পথ পেরিয়েই বিশাল চৈতন্যদেবের ছুটন্ত মূর্তি। সেখানে দাঁড়িয়ে সে বলে, তোমায় যে কবে এমন ধুতি বস্ত্র পরনে, উন্মুক্ত বক্ষ, গলায় সাদা উত্তরীয়, মুখে রসকলি, ন্যাড়া মাথায় দেখবো!
জগন্নাথকে পান-কলা উৎসর্গ করতে হয়,জানো!
তার কথামতো তাই করা হলো। আমার মনে পড়ে গেল পুরুষদের যেন কি বলে? স্ত্রৈণ!

সে বলে, কিছু কিনে দেবে না? — কি নেবে বলো?
আশ্রয় ছায়া!
— এসব আবার কেনা যায় নাকি?
আমি এই ছাতিমের চারাটি কিনবো!
গাছের চারা! আমি নারী ঐশ্বর্য দেখি, প্রজ্ঞা খুঁজে পাই।

— ছাতিম! এই নামটি কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দেওয়া।
পুতবে কোথায়?
তোমাদের বাড়ির কাছেই যে মাঠ, কবরস্থানটি রয়েছে তার এক কোণে পুতে দেব।
সে নিজের হাতে মাটি খুঁড়ে পুতলো ছাতিমের চারা আর আমি দিলাম জল।
সে বলে, এখানে পুতলাম কেন,তার একটা কৌশল আছে। এই সুযোগে রোজ একবার বাইরে বেরোনো যাবে, গাছটি দেখতে যাচ্ছি বলে।

বিশাল ছাতা ছড়ানো গাছ! গায়ে গায়ে ছোঁয়া সবুজ পাতা। তার নিচে বিশাল গোলাকার ছায়া, আশ্রয়। ছাতিম ফুলের গন্ধ…

পদবী ছিল বারিক পালিয়ে হয়ে গিয়েছিল খাতুন। চাঁপার মতো এমন কুচকুচে কৃষ্ণময়ী মেয়ে আমি কখনো দেখিনি।

চাঁপা নেই। আমি উল্টোরথের দিন বিকেলে চলে যাই পাল্লাদহের গোরস্থানে! সেখানে কটি ছাতিম ফুলের পাতা রেখে আসি।